রমজান মানেই উর্ধ্বগতি
চলছে পবিত্র মাস রমজান। তার সাথেই চলছে ভয়াবহ কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় থাবা সেই সাথে লকডাউন লকডাউন খেলা। বাংলাদেশে লকডাউন মানেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দ্বিগুণ দাম আর ব্যবসায়ীদের একটাই অযুহাত পণ্যের আমদানী কম। এই অবস্থায় উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের জন্য জীবনযাপন ততটা কঠিন না হলেও সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষগুলোর জন্য দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোও অসম্ভব প্রায়।
রমজান মাস সত্যিই বরকতের মাস বাংলাদেশের অতি লোভী, প্রতারক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর কাছে। তারউপর চলছে লকডাউনের নাটক। ব্যবসায়ীরা যেনো সোনায় সোহাগা। আর তাদের এই অতি লোভ, প্রতারণাসহ নানা ধরনের নৈরাজ্যের কারণে রমজান মাস বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে এখন যেন পরিণত হয়েছে বিড়ম্বনা, হয়রানি আর নানা ধরনের জিল্লতি হিসেবে। কেন এই পরিস্থিতি? রমজান শুরুর আগেই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে থাকে বিভিন্ন জিনিসের দাম। বাড়তে থাকে চাঁদাবাজি, দুর্নীতিসহ নানা প্রতারণা। তবে চিত্রটা এর বিপরীত হওয়ার কথা ছিলো।
বাংলাদেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্র। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। আমাদের জন্য রমজান মানে রহমতের মাস, সৌভাগ্যের মাস। কিন্তু এই রহমতের যেনো আকাল পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজারে। সাধারণ মানুষের ভোগবিলাস তো দূরের কথা অতি প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। একবার ভেবে দেখুন দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোর কথা। এমনিতেই এদের আয়ের পথ বন্ধ বললেই চলে এই লকডাউনে তারউপর যদি এতো চড়া দামে চাল, ডাল, তেল সহ খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনতে হয় তাহলে এই মানুষগুলো কিভাবে অর্থের যোগান দিবে?
অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় আমরা কতটা পিছিয়ে আছি তা তুলনার বাইরে। বিভিন্ন মুসলিম দেশে রমজান মাসে চলে বাংলাদেশের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। বিশেষ করে আরব দেশগুলোতে রমজান মাসজুড়ে চলে দাম কমানোর প্রতিযোগিতা। সরকারিভাবে যেমন বিভিন্ন জিনিসের দাম কমিয়ে নির্ধারণ করে দেয়া হয় তেমনি বেসরকারি পর্যায়েও ব্যবসায়ীরা দাম কমানো এবং বিশেষ ছাড়ের প্রতিযোগিতায় নামেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবার শতকরা ৯০ ভাগ পর্যন্ত পণ্যের ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে রমজান উপলক্ষে। সাধারণ আয়ের মানুষ সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন রমজান মাসে কম দামে জিনিসপত্র কিনে সংগ্রহের জন্য। বিশেষ করে গরিব প্রবাসীদের জন্য রমজান মাস সেখানে আনন্দের বন্যা বয়ে আনে কেনাকাটার জন্য। অনেকে নামমাত্র মূল্যে পণ্য কিনে জাহাজ ভরে দেশে পাঠানোরও ব্যবস্থা করেন।
অথচ বাংলাদেশে এখন রমজান মাস রহমতের চেয়ে সাধারণ মানুষগুলোর জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কবে এই ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবো আমরা? এখন বলতে পারেন সরকার তো কয়েক কোটি টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এই টাকার অর্ধেকও সাধারণ জনগণ ভোগ করতে পারবে কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ থেকেই যায়।
সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলতে চাই মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে এই পবিত্র মাসে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়ী শ্রেণির উপর আইন ধার্য করুন রমজান মাসে অকারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম না বাড়াতে। আর আইন যদি ভঙ্গ হয় তাহলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরাও চাই মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে আরব দেশগুলোর মতো আমাদের বাংলাদেশ ও একটি নজির স্থাপন করুক, অন্যান্য দেশগুলোর জন্য উদাহরণ হয়ে উঠুক। এই পবিত্র মাস, রহমতের মাস মুসলিম বাঙালির জন্য প্রকৃত অর্থেই বরকতময় হয়ে উঠুক এটাই কাম্য।