বগুড়া কঠোর বিধি নিষেধ এ অজুহাতের শেষ নেই
কোথায় যাচ্ছেন? আত্মীয় মারা গেছে, তার নাম কি? ইয়ে না মানে!
রোববার (২০ জুন) বেলা ২টা ৩০ মিনিট। লকডাউন কার্যকরে বগুড়া শহরের সাতমাথায় জেলা পুলিশের পক্ষথেকে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। মোটর সাইকেল চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন একজন। পুলিশ সিগনাল দিয়ে তাকে থামালো। পুলিশ মোটর সাইকেলে আরোহীকে জিজ্ঞাস করলেন, কোথায় যাচ্ছেন? জ্বি আমার আত্মীয় মারা গেছে, সেখানে। আপনার মারা যাওয়া আত্মীয়র নাম? ইয়ে মানে ( মাথায় হাত রেখে চুলকাচ্ছেন)। আসলে তার কেউ পরিচিত বা আত্মীয় মারা যান নি। তিনি মিথ্যা অজুহাত দেখাচ্ছেন বাসা থেকে বের হওয়ার। এমনটায় ঘটেছে বগুড়া শহরের সাতমাথায় লক ডাউনের প্রথম দিনে পুলিশ চেকপোস্টে।
জেলা পুলিশ বিভাগ বলছে শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি চেকপোস্টেই সাধারণ মানুষ পুলিশকে বের হওয়ার বেশ কিছু কারণ দেখিয়ে শহরের চলাফেরা করেছেন। শহরের সাতমাথায় চেকপোস্টে থাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ জানান, বগুড়া পৌরসভা ও সদর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যা বাস্তবায়নে পুলিশ সদস্যরা চেকপোস্টে চেক চলছে যাতে অযথা কেউ ঘোরাফেরা করতে বের না হয়। তবে মিথ্যা কথা ও নানা অজুহাতে চলার চেষ্ঠা করছেন। তা সত্যিই দুঃখজনক। কঠোর বিধি আরোপ করা হয়েছে তা চলাকালীন সময়ে পুলিশের চেকপোস্ট অব্যাহত থাকবে।
বগুড়া ১ সপ্তাহের লক ডাউনের প্রথম দিনে কঠোর বিধি নিষেধের মধ্যেও ঢিলেঢালা ভাবে পালিত হচ্ছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে।
কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের মধ্যে বগুড়া পৌরসভা ও সদর উপজেলায় সর্বাত্মক কঠোর বিধি-নিষেধের প্রথম দিনে অনেকটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে।
জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি থাকায় শনিবার সকালে বগুড়া পৌরসভা এবং সদর উপজেলায় সর্বাত্মক কঠোর বিধি-নিষেধের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছে। পৌরসভা ও সদর উপজেলা এলাকায় ৬টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ১৩ মামলায় ৭ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসিম রেজা।
রোববার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের প্রধান সড়কে ইজিবাইক ও সিএনজি এর সাথে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। কর্তব্যরত পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তৎপরতার ভেতরেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব যানবাহনের যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ভেতরের সড়কগুলোতেও বিনা বাধায় হালকা যানবাহন চলাচল করছিল। জেলার অন্য উপজেলা থেকে সদর উপজেলায় মানুষজনের চলাচলও ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। আর এ সুযোগে সিএনজি, অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকেরা যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শহর এলাকায় বেশিরভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ থাকতে দেখা যায়।
এছাড়া জনগণকে চলাচলে বিধি-নিষেধ মানাতে মাঠে রয়েছেন জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেটেরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করেছেন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে শহরের ভিতরে জনসমাগম কমাতে কাজ করছে।
বগুড়া জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব ও সিভিল সার্জন ডা. মোঃ গওসুল আজিম চৌধুরী বলেন, বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। এরপরও কিছু কিছু সড়কে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু অটোরিকশা চলাচলের চেষ্টা করছে। সেগুলোও নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় শনাক্ত হয়েছেন ৭৪জন এবং এই ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৩জনের। জেলায় করোনায় আক্রান্ত হলেন ১২ হাজার ৮৭২ জন এবং সুস্থতার সংখ্যা দাড়িয়েছে ১২ হাজার ১৭৬ জন। গত ৪৮ ঘন্টায় ৫ জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩৪৫ জন। জেলায় বর্তমানে করোনায় চিকিৎসাধীন ৩৫১ জন।