বগুড়ায় ব্যাক্তিগত উদ্যোগে মিলেছে ৩২ টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা

বগুড়ায় শ্বাসকষ্টে থাকা করোনা রোগীদের উচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহের জন্য সরকারি দুটি হাসপাতালে আরও ১২টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা মিলেছে।
আজ রোববার বগুড়ার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসব হস্তান্তর করা হয়। তবে সরকারিভাবে রোববারের মধ্যে বগুড়ায় ১০ থেকে ১৫টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা দেওয়ার কথা বলা হলেও তা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দুই হাসপাতালে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬। এর মধ্যে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হলো ২৭টি এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ১৯টি। রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতাল দুটিতে রোববার ১২৫টি শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বগুড়ার করোনা বিশেষায়িত সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত সাত রোগীর মৃত্যু হয়। উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহকারী সরঞ্জাম হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা–সংকটে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সাপোর্ট না পেয়ে রোগীদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্বজনেরা।
গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ দেখে বিষয়টি শুক্রবার রাত ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আদালত এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে জেনে জানাতে বলেন। এর ধারাবাহিকতায় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শনিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের একক ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চকে জানান, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত মুমূর্ষু রোগীদের জন্য সরকারিভাবে রোববারের মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা পৌঁছে দেওয়া হবে।
রোববার করোনা বিশেষায়িত মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের রোগীদের উচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহের জন্য তিনটি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা প্রদান করেছেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাংসদ গোলাম মো. সিরাজ। তাঁর পক্ষ থেকে বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ টি এম নুরুজ্জামানের কাছে এসব সরঞ্জাম হস্তান্তর করেন।
একই দিন মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের জন্য বিএসআরএম গ্রুপ অব কোম্পানিজের পক্ষ থেকে জোনাল সেলস হেড মোস্তাফিজুর রহমান দুটি এবং বগুড়া জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আরও দুটি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা হস্তান্তর করা হয়। এর আগে গতকাল শনিবার এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে এই হাসপাতালে ১০টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা হস্তান্তর করা হয়।বিজ্ঞাপন
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, রোববার পর্যন্ত হাসপাতালে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯। চালু হয়েছে ১২টি। রোববার হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা আরও ২৫টি বৃদ্ধির পর এখন ২৫০টি দাঁড়িয়েছে। রোগী ভর্তি রয়েছে ২৪০ জন। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে মাত্র একটি।
অন্যদিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিজ লিমিটেড আরও তিনটি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা প্রদান করেছে। এ ছাড়া সাংসদ গোলাম মো. সিরাজ এই হাসপাতালে দুটি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা প্রদানের কথা জানিয়েছেন। এর আগের দিন শনিবার এই হাসপাতালে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের পক্ষে এই হাসপাতালে আরও ১০টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা হস্তান্তর করা হয়।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, রোববার পর্যন্ত হাসপাতালে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭। এর মধ্যে রোববার পর্যন্ত ২৫টি চালু করা হয়েছে। হাসপাতালে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে ২৭টি। তিনি আরও জানান, শনিবার পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডে ৮টি আইসিইউসহ ১০০ শয্যা ছিল। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় রোববার ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। রোগী ভর্তি রয়েছে ১০৯ জন।
রোববার বেলা একটায় বগুড়ার সিভিল সার্জনের সম্মেলনকক্ষে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে বলা হয়, জেলায় অক্সিজেনের কোনো সংকট নেই। হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে কেউ মারাও যায়নি। গত শুক্রবার করোনা বিশেষায়িত মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে কেউ অক্সিজেন সংকটে মারা যাননি, বেশি বয়সী করোনা রোগী হওয়ায় শ্বাসকষ্টের সঙ্গে তাঁদের অন্য সমস্যাও ছিল।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সংকট থাকলেও এখন নেই। রোববার পর্যন্ত ১২টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা চালু হয়েছে। সোমবারের মধ্যে আরও সাতটি চালু হবে। অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ২২০টি।
জেলা সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী বলেন, গ্রামের লোকজন এখনো সচেতন নয়। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর একেবারে শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আসছেন। মারা যাওয়া রোগীর ৭৫ শতাংশ রোগীর বয়স ৬০ বছরের ওপর। করোনা ছাড়াও বার্ধক্যজনিত নানা রোগী আগে থেকেই আক্রান্ত। অক্সিজেন দিয়ে তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করেও বেশি কিছু করার থাকছে না। রোববার পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা পাওয়া যায়নি বলে জানান সিভিল সার্জন।