প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ রঞ্জু এর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
পৃথিবীতে অনেক মহান ব্যক্তি স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন তাদের কাজের মাধ্যমে। তেমনি সাহসিকতা, নির্ভীক দেশপ্রেম আর জনকল্যাণমূলক কাজের জন্যই বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় আজো স্থান করে আছেন দেশের সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাগণ। তাঁদেরই একজন দেশপ্রেম, অসীম সাহসিকতা আর মানবিকতার এক অসাধারণ সম্মিলনে নিজেকে উদ্ভাসিত করেছিলেন বগুড়া জেলার সাবেক কমান্ডার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ রনজু। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা সঙ্গি করে সারা জীবন তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ রনজু জীবিতকালে বিভিন্ন সমাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। জেলা চাউল কল মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক এবং সারিয়াকান্দি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বগুড়ার সদালাপী এই মানুষটির জন্ম ১৯৫৩ সালের ১ ডিসেম্বর বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের সাতটিকরী গ্রামে। (বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের ওয়েবে বলা হয়েছে)। এছাড়া দেশরক্ষা বিভাগ হতে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী এবং মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি বঙ্গবীর মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী স্বাক্ষরিত এক পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে আব্দুল আজিজ পার্টি লিডার হিসেবে (এফ এফ নং ৩২৬০) পার্টি নং ৮৬ পিতা গোলাম রহমান মন্ডল, গ্রাম সাতটিকরী, থানা গাবতলী, জেলা বগুড়া, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সৈনিক। তিনি ৭ নং সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁর অবদান চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। স্বাধীনতার পর স্বাধীন দেশে এসে তিনি নিজ এলাকার সমাজ উন্নয়নে নীরবে কাজ করে যান। আজীবন তিনি সমাজ উন্নয়নে কাজ করতে গিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। স্বাধীনতার পর অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নয়নে বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে তিনি ছিলেন সোচ্চার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যেমন ছিলেন দক্ষ তেমনি স্বাধীনতার দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটকে শক্তিশালী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। তার সময়েই বগুড়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নান্দনিকভাবে গড়ে উঠে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে বগুড়ার অন্যান্যদের মধ্যে তিনিও বিভিন্ন আন্দোলনে নিজেকে সামিল করেন। তিনি বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত থেকেছেন। সমাজের অবহেলিত শিশুদের কল্যাণে, ছিন্নমুল মানুষের জন্য আজীবন তিনি সেবামুলক কাজ করেছেন। শিক্ষা বিস্তারে নিজ এলাকায় ছিলেন সবসময় অগ্রণী ভূমিকায়। অসহায়দের গোপনে খাবার বিতরণ করতেন। তার এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আর্থিকভাবে দান করেছেন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি আনিছা আজিজ পারভীনের সাথে ঘর সংসার করেন। তাদের সংসারে মো: আনোয়ার পারভেজ রিপন ও মোছা: রুমানা আজিজ রিংকি নামের দুই সন্তান আছে। আনোয়ার পারভেজ ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। আর কন্যা রুমানা আজিজ রিংকি বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। দলের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজের ফল হিসেবে রুমানা আজিজ রিংকিকে বগুড়া জেলা যুবলীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নাম রাখা হয়। পরবর্তিতে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন হলে সেই কমিটির তিনি সদস্য পদ লাভ করেন। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হয়ে তিনি সকল লড়াই সংগ্রামে উপস্থিত থাকেন। তিনি সকল সভা, জনসভা, সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি সফলে উপস্থিত হন। রুমানা আজিজ রিংকি জেলা আওয়ামী লীগে সদস্য পদ পেয়ে নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে চলেছেন। করোনাকালে তার নিজ এলাকাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে খাবার বিতরণ করে যাচ্ছেন নিয়মিত। সাধ্যমত তিনি মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। পিতা আব্দুল আজিজ রনজুর মত কন্যা রুমানা আজিজ রিংকিও মানুষের জন্য করে যাচ্ছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে সামনে। ২০১২ সালের ১১ আগস্ট এ বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ রনজু পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁকে আমরা বগুড়াবাসী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।