খালাতো ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে লাশ হলেন ৩ জন

নারায়ণগঞ্জ থেকে বান্দরবানে বেড়াতে গিয়েছিলেন খালাতো, মামাতো ভাইবোন ও আত্মীয়-স্বজনসহ ১০ জন। সবার বয়স ১৭ থেকে ২৫-এর মধ্যে। দুদিন আনন্দ-উল্লাসে বান্দরবানের রূপ উপভোগ করলেও তৃতীয় দিনে রোয়াংছড়ির তারাছার বাধরা ঝরনার পাশে সাঙ্গু নদীতে গোসলে নেমে লাশ হলেন তাদের তিন জন।
নদীতে ডুবে যাওয়া খালাতো ভাইকে বাঁচাতে গিয়েই ওই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, বুধবার (২২ ডিসেম্বর) ফতুল্লা থেকে তারা বান্দরবান যান। ওঠেন শহরের হোটেল দ্য প্যারাডাইসে। প্রথম দুদিন মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরিসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরেছেন। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে তাদের ফতুল্লা ফেরার কথা। সকালে হোটেলে ব্যাগ, কাপড় গুছিয়ে বের হন নৌকাভ্রমণে। শহরের ক্যাচিংঘাটা থেকে শ্যালো ইঞ্জিনের নৌকা নিয়ে চলে যান বেতছড়ার বাধরা ঝরনায়।
সেখানে ঝরনার মোহনায় নদীর স্বচ্ছ পানি দেখে সাঁতার না জানা সত্ত্বেও আট জন নেমে পড়েন। দুই জন নদীর পাড়ে ছিলেন। প্রায় ৪০ মিনিট নদীতে গোসল করে সাত জন তীরে এলেও রয়ে যান খালাতো ভাই তানিশ। উঠতে যাবেন এমন সময় তানিশ টের পান পায়ের নিচে মাটি নেই। এ সময় চিৎকার দেন। তাকে ডুবতে দেখে বাঁচাতে নেমে পড়েন সবাই। বহু কষ্টে তাকে টেনে তুললেও ডুবে যান খালাতো ভাই মো. আহনাফ আকিব, তার ছোট বোন মারিয়াম আদনীন ও তাদের খালাতো বোন মারিয়া ইসলাম। পরে মারিয়াকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিখোঁজ থেকে যান তানিশের খালাতো ভাইবোন। শনিবার পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা তাদেরও লাশ উদ্ধার করেছেন।
এ বিষয়ে তানিশ বলেন, ‘নদীর স্বচ্ছ পানি দেখে আট জন গোসল করতে নামি। প্রায় ৪০ মিনিট পানিতে গোসলের পর বুঝতে পারি, আমার পায়ের নিচে মাটি নেই। বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকি। ওই মুহূর্তে আমাকে বাঁচাতে সবাই নদীতে নামেন। পরে টেনে তোলেন। ততক্ষণে ভাইবোন নিখোঁজ হয়ে যান। হাঁটু পানি হঠাৎ এত গভীর হলো কীভাবে, বুঝতে পারিনি।’
সন্তানদের বিপদের কথা শুনে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ থেকে বান্দরবান ছুটে যান সবার বাবা-মা। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আদনীনের ও দুপুর দেড়টার সময় আহনাফের লাশ উদ্ধার করা হয়। ছেলেমেয়ের লাশ উদ্ধারের পর আর্তনাদ শুরু করেন বাবা জহিরুল ইসলাম ও মা সাইদা শিউলী।
জহিরুল ইসলাম জানান, দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মেয়ে আদনীন সবার ছোট। আহনাফ সবার বড়। আদনীন নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। আহনাফ ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এখন মেজো ছেলে ছাড়া তাদের আর কোনও সন্তান রইলো না।
সাইদা শিউলী বলেন, প্রতি বছর তারা বিভিন্ন জায়গায় দলবদ্ধ হয়ে বেড়াতে যায়। এবারও তারা বেড়াতে এসেছিল। তিনি আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে এ কোন পরীক্ষায় ফেললো?’
এদিকে, স্বজনরা মৃত তিন জনের লাশ বুঝে পেয়েছেন। শনিবার রাতে লাশগুলো নিয়ে ফতুল্লার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হবেন বলে জানান স্বজনরা।
রোয়াংছড়ি থানার ওসি মো. আবদুল মান্নান জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিনা ময়নাতদন্তে লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবারের লোকজন লাশ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হবেন।