ইলিয়াস চাইলে আমি সংসার করতে চাই: সুবহা
ইলিয়াস হোসাইন চাইলে এখনও তার সাথে সংসার করতে চান অভিনেত্রী শাহ হুমায়রা হোসেন সুবহা।
সোমবার (২৫ জুলাই) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক সাবেরা সুলতানা খানমের আদালতে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগের মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে একথা বলেন সুবহা।
এদিন মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। সুবহা আদালতে হাজির হন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া ইলিয়াস হোসাইনও এদিন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন।
সকাল ১১টার দিকে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। সুবহা সাক্ষীর কাঠগড়ায় যান এবং ইলিয়াস হোসাইন আসামির কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান।
সুবহা বিচারককে বলেন, ‘গতকাল মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করি। আসামি না থাকায় তা হয়নি। আজকের জন্য দিন ধার্য আছে।’
তখন বিচারক সুবহার কাছে জানতে চান, ‘মামলা প্রত্যাহারের জন্য আপনি কি সম্পূর্ণ স্যাটিসফাই?।’ সুবহা তখন বলেন, ‘না।’ বিচারক কারণ জানতে চাইলে সুবহা বলেন, ‘এখনও কিছু দেনা-পাওনা বাকি আছে। আর আমি এখনও সংসার করতে চাই। ইলিয়াস যদি চায়।’
তখন বিচারক বলেন, ‘কেউ সংসার করতে না চাইলে সেখানে না যাওয়ায় ভালো।’ এরপর বিচারক সুবহার কাছে জানতে চান, আসামি তাকে কত টাকা দিয়েছে, দেনমোহর কত? তখন সুবহা বলেন, সব মিলিয়ে ২০ লাখের মধ্যে ১০ লাখ দিয়েছে।
এসময় নথি দেখে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, ‘বিয়ের দেনমোহর সাত লাখ টাকা।’ তখন বিচারক বলেন, ‘১০ লাখ তো বেশি দিয়েছে।’ সুবহা বলেন, ‘৮ মাসের ভরণপোষণসহ অন্যান্য কিছু মিলিয়ে ১০ লাখ দিয়েছে।’
বিচারক তখন সুবহার কাছে জানতে চান, ‘১০ লাখ টাকা পেয়েছেন। আপনি কি এতে স্যাটিসফাই? স্যাটিসফাই না হলে মামলা চালাতে পারেন। তখন সুবহা বলেন, ‘আমি মামলা চালাতে চাই না।’
তখন বিচারক সুবহার কাছে জানতে চান, ‘আসামির বিরুদ্ধে আপনার কোনও অভিযোগ আছে? সুবহার বলেন, না। দুই পরিবারের উপস্থিতিতে তাদের আপস মীমাংসা হয়ে গেছে।
এরপর আসামিপক্ষ আপস মীমাংসার অ্যাফিডেটিভ জমা দেন। তখন রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, মামলা আপস করতে চাইলে সাক্ষ্য দেন।
তখন সুবহার সাক্ষ্য দেন। তিনি বলেন, ‘মামলাটি আপস হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। দেনা-পাওনা পরিশোধ করেছে।’
এরপর আসামিপক্ষ সুবহাকে জেরা করেন।
পরে ইলিয়াসের জামিনের বিষয়ে শুনানি হয়। আদালত শুনানি শেষে ইলিয়াসের জামিন মঞ্জুর করেন।
আদালত আগামী ২৭ জুলাই আসামির আত্মপক্ষ শুনানি, মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন এবং রায়ের জন্য রাখেন।
এর আগে, রোববার সুবহা আদালতে সাক্ষ্য দেন। তিনি ইলিয়াসের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের মৌখিক আবেদন করেন। ইলিয়াস পলাতক থাকায় এ বিষয়ে রোববার শুনানি হয়নি।
গত ১৯ জুন একই আদালত ইলিয়াসকে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে চার্জগঠনের আদেশ দেন। গত ২২ মার্চ ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন একই ট্রাইব্যুনাল। ৩ জানুয়ারি রাজধানীর বনানী থানায় মামলাটি দায়ের করেন সুবহা।
মামলাটি তদন্ত করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইলিয়াসকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন ডিএমপির তেজগাঁও নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের সাব-ইন্সপেক্টর মাছুমা আফ্রাদ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত বছর সেপ্টেম্বরে ইলিয়াসের সঙ্গে সুবহার পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে গড়ে ওঠে। গত ১ ডিসেম্বর তারা বিয়ে করেন। বিয়ের সময় সুবহার পরিবারের পক্ষ থেকে ইলিয়াসের চাহিদা মোতাবেক ১২ লাখ টাকার রোলেক্স ব্র্যান্ডের ঘড়িসহ ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পণ্য দেওয়া হয়। কিন্তু এতেও ইলিয়াস সন্তুষ্ট হয়নি। এর মাঝে সুবহা জানতে পারেন, ইলিয়াস আগে একাধিক বিয়ে করেছেন এবং অসংখ্য প্রেমের সম্পর্ক চলমান। এরই মাঝে ইলিয়াস সুবহার কাছে ফ্ল্যাট কেনা বাবদ ৫০ লাখ এবং গাড়ির জন্য আরও ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। গত ৯ ডিসেম্বর ইউটিউব চ্যানেল কেনার জন্য সুবহার মায়ের কাছে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন ইলিয়াস। তাকে আড়াই লাখ টাকা দেয় সুবহার পরিবার। পরে গত ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার জন্য ৮০ লাখ টাকার জন্য চাপ দেন ইলিয়াস। এনিয়ে তাদের ঝগড়া হয়। এর জের ধরে রাত ৮টার দিকে সুবহাকে শারীরিক নির্যাতন করেন ইলিয়াস। পরদিন আবারও ৮০ লাখ টাকা যৌতুক চান তিনি। এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইলিয়াস সুবহাকে মারধর এবং মাথা দেয়ালের সাথে ঠুকে জখম করেন। এরপর ইলিয়াস সুবহাকে ব্যথার ওষুধের কথা বলে অন্য ওষুধ খাওয়ান। একটু পর সুবহা অজ্ঞান হয়ে যান। এ সুযোগে ইলিয়াস আলমারিতে থাকা ২০ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার এবং ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যান। সুবহার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।