অন্যান্য

একজন সফল উদ্দোক্তা আফসানা ইয়াসমিন

রাজু আহমেদ, সিংড়াঃ আফসানা ইয়াছমিন। একজন সফল উদ্যোক্তা। ইচ্ছে শক্তি, অদম্য মনোবল তাকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। উদ্দোক্তার পাশাপাশি প্রযুক্তিতে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মনোবাসনা তাঁর।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের হরিনা মৎস্যজীবি পাড়ার বাসিন্দা। অজপাড়া গাঁয়ে থেকেও অদম্য মনোবলে নিজেকে মেলে ধরতে ভুল করেননি। পিতাঃ মোঃ আদেশ আলী। একজন কৃষক। মাতাঃ সোহাগী বেগম একজন গৃহিণী। ১ ভাই, দু বোনের মধ্যে ছোট সে।

প্রাইমারী গন্ডি পেরিয়ে পুন্ডরী আলিম মাদরাসা থেকে ২০১৫ সালে এসএসসি পাশের পর কলম ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হন। ঐসময় ফেসবুকে একাউন্ট করেন। এইচএসসি পড়াশোনা করা সময় কম্পিউটারে দক্ষ হতে ৬ মাসের কোর্স সম্পন্ন করেন। ২০১৭ সালে এইচএসসি পাশ করেন। এসময় ২০১৬-১৭ সালে আইসিটি বিভাগের উদ্দোগে ২০০ ঘন্টা লার্নিং এন্ড আর্নিং প্রকল্পের গ্রাফিকস ডিজাইন-২১৩ নং ব্যাচে কোর্স সম্পন্ন করেন এবং কৃতিত্বের সাথে প্রথম স্থান অর্জন করেন। প্রত্ত্যন্ত গ্রাম এলাকায় বাড়ি হওয়ায় সেখানে ওয়াই-ফাই লাইন ছিলোনা তারপরেও তার ইচ্ছে বাবা একটি কম্পিউটার কিনে দেন। অনলাইনে গ্রাফিক্স ডিজাইন করে আয় শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তীতে কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গ্রাফিকস ডিজাইন কাজও বন্ধ হয়ে যায়,ওই সময়ে সারা বাংলাদেশে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রতিটা ব্যাচের শ্রেষ্ঠ দের ল্যাপটপ দেওয়া হলেও সিংড়া তাকে আইসিটি বিভাগ থেকে ল্যাপটপ দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি সিংড়া উপজেলার কৃতি সন্তান মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সুদৃষ্টি কামনা করি। একটি ল্যাপটপ পেলে অনলাইন বিজনেস এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কাজ করতে সক্ষম হবো। তিনি আরো বলেন, আমি বর্তমানে স্মার্ট ফোনে অনলাইনে কাজ করছি। বিজনেস করছি।

এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে তিনি আরো বলেন,
২০২০ সালে করোনাকালিন সময়ে অনলাইনে হস্তশিল্পের কাজ শুরু করি এবং গ্রুপ এ যুক্ত হই। বাড়িতে বসে নানা ধরনের পন্য সরবরাহ শুরু করি। বাড়িতে কাঁথা, বিছানার চাদর ডিজাইন করেন, পুঁথি দিয়ে ব্যাগ, মালা, কাবাঘর, ডোরবেল, ঝারবাতি, সব ধরনের পুতির ফল তৈরি করে অর্ডার পৌছে দেই।এছাড়াও কুশিপন্যের মধ্যে রয়েছে বাচ্চাদের সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের কুশির নেক দিয়ে তৈরি জামা, জুতা টুপি ও হেয়ার ব্যান্ড, এবং বড়দের জামার গলা, হেয়ার ব্যান্ড, পাপোশ, চাবির রিং বিভিন্ন ধরনের ফল ইত্যাদি। এছাড়া পাখির বাসা সহ বিভিন্ন ধরনের পাখি তৈরি করে অনেক প্রসংশা অর্জন করেন।

স্থানীয়রা জানায়, তার হাতের কাজ একদম নিখুঁত কাজ। করনাকালিন সময়ে সে বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের মাস্ক নিয়ে কাজ করেও ভালো সাড়া পেয়েছেন। থ্রি পিছ, কোটি গ্রাউন ইত্যাদিও বিক্রি করে। করোনাকালিন সময় থেকে তিনি দুই লক্ষ টাকার সেল করেন। বর্তমানে তিনি অনার্স চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। তাঁর অনলাইন পেজের নাম আফসানা-স হ্যান্ডিকাফ্টস( Afsana’s Handicrafts) ও নিজস্ব গ্রুপ (এখানেই সব) এবং (তরুণ উদ্দোক্তা-Young Entepreneur) গ্রুপ অনলাইনে কাজ নিয়ে তিনি অর্ডার পৌছে দেন। এছাড়াও তিনি উই গ্রুপ এ যুক্ত আছেন ২০২০ সাল থেকে সেখানেও ভালো সারা পেয়েছেন। শুধু তাই নয় অফলাইন এ ও ভালো সারা পেয়েছেন তার পন্যের কোয়ালিটি ভালো হওয়ায়।

নাটোর জেলা বিসিক সহ আরো অনেক জায়গা থেকেও সরকারি ভাবে প্রশিক্ষন নিয়েছেন। তাঁর কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি টিম গঠন করেছেন। এলাকার কয়েকজন কে একদম ফ্রি কাজ শেখানোর পর তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর টিমের সদস্য মলিনা আক্তার, সাদিয়া আক্তার, মায়মুনা আক্তার, সামিয়া আক্তার এদেরকে উদ্যোক্তা বানানোর সপ্ন রয়েছে।

তিনি জানান সামনে আরো ভালো কিছু করার ইচ্ছে আছে তাই সততার সাথে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আইসিটি বিভাগ থেকে কিংবা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো এগিয়ে যাবার স্বপ্ন তাঁর।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button