আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যয়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আর সদস্য পদের প্রার্থী সর্বোচ্চ ব্যয় করতে পারবেন এক লাখ ১০ হাজার টাকা।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ইতোমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রার্থীরা ব্যয়সীমা না মানলে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী শাস্তির মুখে পড়বেন।
চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের ব্যয়ের সীমা:
(ক) ব্যক্তিগত ব্যয়ের সীমা: চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনের উদ্দেশে ব্যক্তিগত খরচ বাবদ সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
(খ) নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা: চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনের উদ্দেশে নির্বাচনী ব্যয় বাবদ পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। উল্লিখিত বিষয়টি বিভিন্ন চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক, বিভিন্ন মিটিং, সেমিনার, ওয়ার্কশপ বা সম্ভাব্য সব পন্থায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের অবহিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(২) সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য ও সদস্য পদের নির্বাচনের ব্যয়ের সীমা:
(ক) ব্যক্তিগত ব্যয়ের সীমা: সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য ও সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনের উদ্দেশে ব্যক্তিগত খরচ বাবদ সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
(খ) নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা: সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য ও সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনের উদ্দেশে নির্বাচনী ব্যয় বাবদ এক লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদ রয়েছে ৪৬৩টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদ রয়েছে ১৭২টি। আর চেয়ারম্যান পদ রয়েছে ৬১টি। এসব নির্বাচনে ৪৭৭টি ভোটকেন্দ্রের ৯৫৫টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা জানিয়েছে, চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ১৬২ জন, বাছাই শেষে বৈধতা পেয়েছিলেন ১৪২ জন। সাধারণ সদস্য পদে ১ হাজার ৯৮৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন, এদের মধ্যে বৈধতা পেয়েছিলেন ১ হাজার ৭৪৪ জন। আর সংরক্ষিত সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৭১৫ জন, যাদের মধ্যে বৈধতা পেয়েছিলেন ৬৭৫ জন।
এরপর আপিল নিষ্পত্তি ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালন শেষে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে ৯৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে এক হাজার ৫১৩ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে রয়েছেন ৬২২ জন প্রার্থী।
এদিকে জামালপুর, ঢাকা, নোয়াখালী, পাবনা, পিরোজপুর, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝালকাঠি, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, বরগুনা, বরিশাল, বাগেরহাট, ভোলা, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী (মোট ২৭ জন) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এরমধ্যে আদালতের আদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাচনী সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। আর নোয়াখালীতে চেয়ারম্যান পদে আদালতের আদেশে একজন প্রার্থী যোগ হয়েছে। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন ২৬ জন।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ৬৬ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া ফেনীর জেলা পরিষদ নির্বাচনের সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারাসহ সব প্রার্থীকেই নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হবে।
২০১৬ সালের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৯ জেলায় ১৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তফসিল অনুযায়ী- স্থানীয় এ সরকারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৭ অক্টোবর। নির্দলীয় এ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন।
আগের আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে যতগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর সদস্যরাই জেলা পরিষদ সদস্যদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতেন। অর্থাৎ সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, মেয়র এবং কাউন্সিলররা বা সদস্যরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করতেন।
কিন্তু সংশোধিত আইনে জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলার সংখ্যার সমান। আর নারী সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা চেয়ারম্যানদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, তবে দুইজনের কম নয়। অর্থাৎ একেক জেলা পরিষদের সদস্যের সংখ্যা হবে একেক রকম, সংশোধনের আগে যেটা ২১ জন নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল।
আগে পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তী নির্বাচন না হওয়ার পর্যন্ত পূর্বের পরিষদকেই দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়েছিল আইনে। কিন্তু সংশোধিত আইনে সেটির পরিবর্তে প্রশাসক বসানোর বিধান আনা হয়েছে। সেই ক্ষমতা বলেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রশাসক বসানোর আদেশ জারি করে, যার বলেই এখনো প্রশাসক রয়েছে দায়িত্বে।