বগুড়া জেলা

বগুড়ায় সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের মিছিল ও নারী সমাবেশ

বগুড়ায় সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের মিছিল ও নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত।

নারী জাগরণের পথিকৃৎ মহিয়ষী নারী বেগম রোকেয়ার ১৪২তম জন্ম ও ৯০ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে বেগম রোকেয়া স্মরণে এ আয়োজন করা হয়।

শুক্রবার বিকাল  ৩টায় শহরে মিছিল শেষে সাতমাথায় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। 

সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম বগুড়া জেলা  সভাপতি অ্যাড. দিলরুবা নূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বগুড়া জেলা আহ্বায়ক কমরেড এ্যাড.সাইফুল ইসলাম পল্টু, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা সহ-সভাপতি রাধা রাণী বর্মন, সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা আক্তার অ্যানি, সাংবাদিক শাপলা সোমা, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক নিয়তি সরকার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সাইফুল ইসলাম পল্টু বলেন,  নারী জাগরণের পথিকৃৎ মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া এই উপমহাদেশের নারী শিক্ষা ও নারীমুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজও পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। সময়ের পরিবর্তনে নারীকে ভিন্নভাবে চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ রাখা হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে নারীকে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সম্পত্তিতে আজও নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।  নারী যে মানুষ হিসাবে সমাজে পুরুষের পাশাপাশি সমান ভুমিকা রাখতে পারেন এই পুঁজিবাদী ভোগবাদী মুনাফার সমাজব্যবস্থা তা অস্বীকার করে এবং নারীকে মানুষ হিসাবে মেনে নিতে চায় না। যে সমাজে অর্ধেক নারী সেখানে নারী মুক্তি ছাড়া সমাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই  সমাজের অগ্রগতি ও নারীমুক্তির জন্য এই পুজিঁবাদী-ভোগবাদী সমাজ ভাঙ্গা এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নারী-পুরুষ সকলকে  সমভাবে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

 দিলরুবা নূরী বলেন, বেগম রোকেয়া বাংলাদেশের নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ। সমাজে নারীকে মানুষ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা, নারীর সামনে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করার সাহস, যুক্তি ও আপন প্রত্যয় নিমার্ণের লক্ষ্যে আজীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন লেখনী  ধরেছেন, স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, সংগঠন গড়ে তুলেছেন। বেগম রোকেয়া সমাজে নারীর যে অবস্থান দেখতে চেয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর ৯০ বছর পরও আমরা তার কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারিনি। বাহ্যিকভাবে হয়তো অনেক পরিবর্তন হয়েছে বলে বোধ হবে; নারী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও আছেন। কিন্তু সমাজ মননে যেন আরও অবক্ষয় ঘটে গেছে। সারাদেশে নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পাহাড়ে বা সমতলে, ঘরে-পথে-স্কুলে-কারখানায় যেকোন স্থানে; দিনে বা রাতে যেকোন সময়ে বাংলাদেশে একজন নারী নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অপহরণ, বন্দি করে রেখে গণধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন-হত্যা, বখাটেদের উৎপীড়ন, গণপরিবহনে ধর্ষণ- যৌন হয়রানি, ইন্টারনেটে ব্লাকমেইলসহ ঘরে বাইরে নানা উৎপীড়ন, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে উৎকণ্ঠার বাইরে কোনো নারীর পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন কল্পনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
 

সমাবেশে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন,  স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও বাংলাদেশের আইনে নারী সমানাধিকার পান না। সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব অর্থাৎ পারিবারিক জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনে নারী বৈষম্যের শিকার হন। সমকাজে সমমজুরি আইনে থাকলেও; বাস্তবে প্রায় সমস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারী, পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পেয়ে থাকেন। নারীরা দিনে প্রায় ১৬ ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ৪৫ ধরনের কাজ করেন। পুরুষের তুলনায় নারীরা প্রায় সাড়ে ৩ গুণ কাজ বেশি করেন।

বগুড়ার চিত্রও এর থেকে ভিন্ন কিছু নয়। প্রতিদিন ধর্ষণের খবর পত্রিকা খুললেই পাওয়া যায়। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ফতোয়া দিয়ে নারীর উপর অত্যাচার করা হয়। এই নির্মম বাস্তবতা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তনে, সমাজের সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, নারীমুক্তির আন্দোলনে বেগম রোকেয়া আজও প্রেরণার উৎস। বেগম রোকেয়ার সেই আহ্বান ‘জাগো গো ভগিনী!’ কে ধারণ করে , সমস্ত শোষণ, নির্যাতন, অন্ধত্ব, কুসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই; নারী-পুরুষের মিলিত সংগ্রাম গড়ে তুলি; মনুষ্যত্ব, সভ্যতা, স্বাধীনতা ও মানবতার দাবি আদায় করি এই আহ্বান জানান।

এসএ

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button