খেলাধুলাপ্রধান খবরফুটবল

চোখের পানিতে শেষ হলো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার!

মুখ আর তুলে রাখতে পারছিলেন না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। মরক্কোর বিপক্ষে শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গেই হাঁটা দেন ড্রেসিংরুমের দিকে। কারও জন্য অপেক্ষা করেননি। কারও সঙ্গে হাত মেলানোর প্রয়োজনও মনে করেননি। মরক্কোর কোনো এক ফুটবলার হয়তো এসে পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু পেছনে তাকিয়ে ফিরতি অভিনন্দন দেওয়ারও ইচ্ছে নেই। রোনালদোর পা সোজা চলছে ড্রেসিংরুম টানেলের দিকে। চলতে চলতে কেঁদেই ফেলেন রোনালদো। মাঠে থাকতেই বেরিয়ে আসা চোখের পানি বাঁধ ভাঙে টানেলে ঢুকতেই। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি রোনালদো। চোখে হাত দিয়ে কেঁদে ফেলেছেন অঝোরে। মুখ লুকিয়েই হাঁটতে হয় তাকে যেন টিভি ক্যামেরায় তা ভেসে না ওঠে। কিন্তু এই বেদনাবিধুর ছবি কি আর লুকানো থাকে। সবই উঠে এসেছে টিভিতে। তা দেখে হয়তো বিশ^ জোড়া রোনালদো ভক্তরাও কেঁদেছেন অঝোরে। কালই যে শেষ হয়ে গেল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার!

ফুটবল ইতিহাসের সেরাদের একজন তিনি। ক্যারিয়ারজুড়ে রেকর্ডের বন্যা ছুটিয়েছেন। পাঁচবারের বর্ষসেরাদের সঙ্গে ইউরোপিয়ানদের মধ্যে সর্বোচ্চ চারটি গোল্ডেন শুর খেতাব জিতেছেন। ক্যারিয়ারজুড়ে ৩২টি শিরোপা। আন্তর্জাতিকে ইউরোপিয়ানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯৫ ম্যাচ, ফুটবল ইতিহাসে ১১৮ সর্বাধিক আন্তর্জাতিক গোল। আন্তর্জাতিকের সঙ্গে ক্লাব মিলিয়ে গোলের শিখরে ৮১৩ স্কোর নিয়ে। এসবের সঙ্গে কাল যোগ হলো সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডও। ১৯৬তম আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলতে নেমে কুয়েতের বাদের আল-মুতাওয়ার পাশে বসলেন। সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার এমন অর্জনের দিনেই থামতে হবে এমন বিদায়, কল্পনা করেননি পর্তুগিজ রাজাও। বিশ্বকাপের সময়ই যেমনটা হয়েছে তার সঙ্গে। এরপর তার দেশের জার্সিতে আবার মাঠে নামার সম্ভাবনা ক্ষীণ। নিজে থেকে অবসরের ঘোষণা না দিলে দলে সুযোগ পাওয়া কঠিন তার জন্য। আগে যেমন বলেছেন ২০২৪ ইউরোর আগে অবসরের চিন্তা নেই। এখন হয়তো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে রোনালদোকে। তাই পর্তুগালের হয়ে পঞ্চম বিশ্ব কাপে ৮ গোলের মালিকের শেষটাই ধরে নিতে হচ্ছে!

তবে শেষের এ সময়ে কোচ ফার্নান্দো সান্তোসকে পাশে পেয়েছেন রোনালদো। ম্যাচ শেষে হতাশ এই কোচ বলছিলেন, ‘এই হার আমাদের প্রাপ্য ছিল না। আমরা যোগ্য দল ছিলাম, কিন্তু এটাই ফুটবল মেনে নিতেই হবে। আজ আপনি যদি সবচেয়ে হতাশ কাউকে পান, তবে প্রথমে থাকবে ক্রিশ্চিয়ানো (রোনালদো), এরপর আমি। অবশ্যই এই হার আমাদের মারাত্মকভাবে পীড়া দিচ্ছে। হতাশ করেছে। আমরা ভেবেছিলাম আজ সেমিফাইনালে উঠব। এরপর শিরোপাটাও জিতব। কিন্তু ফুটবলে আপনার মনমতো অনেক কিছু না-ও হতে পারে। আজ আমাদের জন্য তেমনই একটি দিন।’ এই হতাশার দিনে রোনালদোকে শুরুর একাদশে না খেলানোর হতাশা কাজ করে কি না এমন প্রশ্নে সান্তোস বলেন, ‘আমার কোনো আক্ষেপ বা হতাশা নেই। সেদিন যে দল আমি নামিয়েছিলাম তারা সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো খেলেছে। ক্রিশ্চিয়ানো গ্রেট ফুটবলার। সে মাঠে নেমেছে, যখন আমার মনে হয়েছে তার নামা দরকার। আজও যেমন তাকে যখন দলের প্রয়োজন, তখন নামিয়েছি। তাই আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই।’

অথচ এমন দিনে পুরো পর্তুগাল আক্ষেপে ভাসছে। তাদের ম্যাচে একজন আর্জেন্টাইন রেফারির ম্যাচ পরিচালনা মানতে পারছেন না পর্তুগালের অভিজ্ঞ তারকা পেপে ও ব্রুনো ফার্নান্দেজ। ম্যাচ শেষে দুজনই ফিফাকে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে। আর ফিফার বিরুদ্ধে এই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তারা তুলেছেন আর্জেন্টিনাকে নিয়ে। দুই ফুটবলারেরই একই সুর ফিফা আর্জেন্টিনাকে কাপ দিতে চায়। পেপে বলেন, ‘এটা মেনে নেওয়া কঠিন। গতকাল যা হলো (পরশু নেদারল্যান্ডস-আর্জেন্টিনা ম্যাচে) মেসির অভিযোগের পর আমাদের ম্যাচে একজন আর্জেন্টাইন রেফারিকে দায়িত্ব দেওয়া অবিশ্বাস্য। আজ যা আমরা দেখলাম, এরপর ওরা (ফিফা) আর্জেন্টিনাকে কাপটা দিয়েই দিতে পারে। আমি বলছি না তারা কোনো কিছুতে অনুপ্রাণিত হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের কি খেলতে দেওয়া হয়েছে? আমাদের মাত্র ৮ মিনিট ইনজুরি সময় দেওয়া হয়েছে। ওদের গোলকিপার সময় নষ্ট করার পরও। এই ম্যাচে একটা দলই ফুটবল খেলেছে তারা পর্তুগাল। আমরা সত্যিই হতাশ। আমাদের বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য ছিল।’ ব্রুনো আরও একটু মেজাজ দেখিয়ে বলেন, ‘আমি জানি না ওরা (ফিফা) আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ দিতে চায় কি না। এমন এক দলের রেফারিকে দায়িত্ব দেওয়া যারা এখনো বিশ্বকাপে আছে এটা অবিশ্বাস্য। স্পষ্টভাবে সবকিছু আমাদের বিপক্ষে গেছে।’

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button