ধর্মপ্রধান খবর

পবিত্র শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

আজ হিজরি রজব মাসের ২৬ তারিখ, শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত মুসলিম উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ এক দিন শবে মিরাজ। ইসলামে মেরাজের রাত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মানবতার মুক্তির দূত, সাইয়্যেদুল মুরসালিন, রাহমাতুল্লিল আলামিন, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.-এর নবুওয়তি জিন্দেগিতে যে সব অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল তন্মধ্যে মেরাজের ঘটনা অন্যতম। যা পবিত্র কুরআনুল কারিম এবং মাশহুর, মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, তা অস্বীকার করা কুফরি।

মেরাজ অর্থ কি:
মেরাজ আরবি শব্দ, শাব্দিক অর্থ ঊর্ধ্বগমন, আকাশপথে ভ্রমণ করা, সোপান ইত্যাদি। রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে জাগ্রত অবস্থায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা, এরপর বোরাকে করে ঊর্ধ্বাকাশ পাড়ি দেওয়ার মাধ্যমে আরশে আজিমে পৌঁছে আল্লাহর দিদার লাভ করার নামই মেরাজ। কোরআনে কারিমে আল্লাহ বলেন, ‘পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি বান্দাকে তাঁর নিদর্শনগুলো দেখানোর জন্য রাত্রিকালে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশ পবিত্র, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১)

শবে মেরাজ কী ও কেন?
লাইলাতুন বা শব অর্থ হলো- রাত আর মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন। শবে মেরাজ বা লাইলাতুল মেরাজের অর্থ দাঁড়ায়- ঊর্ধ্বগমনের রাত। ‘রজবের’ ২৭ তারিখ নবুয়তের দশম বর্ষে নবী কারিম (স.)-এর ৫০ বছর বয়সে পবিত্র মেরাজ সংঘটিত হয়। (সূত্র: সিরাতে মোস্তফা: আশেকে এলাহি মিরাঠি, ও তারিখুল ইসলাম: মাওলানা হিফজুর রহমান সিহারভি)

পবিত্র মেরাজের যাত্রা শুরু হয় মসজিদে হারাম থেকে। হজরত জিব্রাইল (আ.) বোরাকে করে নবীজিকে বায়তুল মোকাদ্দাস নিয়ে যান। ওখানে তিনি দুই রাকাত নামাজ পড়েন। ওই নামাজে নবীজি (স.) সব নবীর ইমামতি করেন। এরপর ঊর্ধ্বাকাশে যাত্র করেন। যাত্রাপথে প্রত্যেক আসমানে ‍পূর্ববর্তী সম্মানিত নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এরপর সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে আরশে আজিমে মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পবিত্র মেরাজের রাতে বিশ্বনবী (স.) স্বচক্ষে বেহেশত-দোজখ দেখেছেন। অনেক পাপের শাস্তি প্রত্যক্ষ করেছেন। সুবিশাল নভোমণ্ডল পরিভ্রমণ, আরশ-কুরসি প্রভৃতি সামনাসামনি সশরীরে দেখা, সর্বোপরি মহান রবের সঙ্গে পবিত্র দিদার লাভ করাসহ অবলোকন করেছেন সৃষ্টিজগতের অপার রহস্য। নামাজের বিধান রচিত হয় এ রাতেই।

মেরাজের ঘটনা থেকে মুমিন খুঁজে পায় সঠিক পথের দিশা, লাভ করে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ ও দ্বীনের অবিচলতা। প্রিয়নবী (স.) যে আল্লাহ তাআলার কাছে কত দামি ও মর্যাদার অধিকারী, তা এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। তাঁকে এমন মর্যাদা দান করা হয়েছে, যা অন্য কোনো নবীকে দান করা হয়নি। এ ঘটনার ফলে মুমিনের ঈমান মজবুত হয় এবং হৃদয়ে বিশ্বনবী (স.)-এর ভালোবাসা সুগভীর হয়।

শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত:
মেরাজের ঘটনা পুরোটাই ঈমানের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই রাতে আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বিশেষ নৈকট্য দান করেন। মুসলমানদের জন্য নামাজ উপহার দেন। তাই নিঃসন্দেহে ওই রাত ছিল গুরুত্ববহ ও ফজিলতপূর্ণ। এই রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে কোনো মুসলমানের সন্দেহ থাকতে পারে না। তবে, এ ঘটনার পর নবী (স.) অনেক বছর সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও শবে মেরাজকেন্দ্রিক কোনো আমলের ব্যাপারে বিশেষ হুকুম তিনি দিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ রাতে রাসুলুল্লাহ (স.) নিজেও বিশেষ আমল করেননি, সাহাবিদেরও করতে বলেননি। রাসুল (স.) পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পর ১০০ বছর সাহাবায়ে কেরাম জীবিত ছিলেন। শতাব্দীজুড়ে এমন একটি ঘটনাও পাওয়া যায়নি, যেখানে সাহাবায়ে কেরাম ২৭ রজবকে বিশেষভাবে উদযাপন করেছেন। সুতরাং যে কাজ রাসুল (স.) করেননি, সে কাজ সাহাবায়ে কেরামও পরিহার করেছেন। তাই ২৭ রজবে প্রচলিত ইবাদত-বন্দেগিগুলোকে দ্বীনের অংশ মনে করা, সুন্নত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হাদিস ও সুন্নতসম্মত নয়।

বরং অনর্থক কাজ থেকে নিজেদের বিরত রেখে মেরাজের আসল তাৎপর্যকে অনুধাবন করতে হবে। বিশেষ করে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত হাদিয়া নামাজ সঠিক সময়ে আদায় করা। এ ছাড়াও শিরক না করা, পিতা-মাতার অবাধ্য আচরণ না করা, এতিমের মাল আত্মসাৎ করা থেকে বিরত থাকা, সম্পদের অপব্যবহার রোধ করা, খাদ্যাভাবে সন্তানকে হত্যা না করা, অহংকার ও অনুমাননির্ভর কাজ থেকে বিরত থাকা, জেনা-ব্যভিচারের ধারেকাছেও না যাওয়া, প্রতিবেশীর হক আদায় করাসহ ইত্যাদি বিষয়ের শিক্ষা আমরা মেরাজের ঘটনা থেকে পাই।

তবে অন্যান্য দিনের মতো এ রাতেও নফল ইবাদত করতে কোনো বাধা নেই। তাছাড়া রজব মাস আমলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাস থেকে মহানবী (স.) রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন। উম্মে সালমা (রা.) বলেন, নবী করিম (স.) রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘যখন রজব মাস আসত, তা আমরা নবীজি (স.)-এর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম।’ 

শবে মেরাজ উপলক্ষে এ রাতে এতদঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মানুষ বিশেষ ইবাদত বন্দেগিতে লিপ্ত  থাকতে পছন্দ করে থাকেন। বিশেষত এ রাতকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মসজিদে কিংবা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রথা বহুদিন যাবত্ চলে আসছে। অনেকে এ উপলক্ষে নফল রোজা রাখেন। তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করেন।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button