শাজাহানপুর উপজেলা

বগুড়ায় বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে “জার্বেরা ফুল’

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার দুরুলিয়া এলাকায় বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে জার্বেরা ফুল।

“স্মাট এগ্রো” নামের একটি প্রতিষ্ঠান শাজাহানপুর কৃষকদের মধ্যে এই ফুল চাষ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং চাষে আগ্রহী করে তুলে কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলছে। এই ফুল চাষ ব্যয়বহুল হলেও লাভও কম নয়।

জাত: জার্বেরা ফুল বিশ্বে ত্রিশ রকমের হলেও বাংলাদেশে মাত্র পাঁচটি জাতের ফুলের চাষ হচ্ছে।

বৈশিষ্ট্য: বিঘাপ্রতি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কন্দ রোপণ করতে হয়, আর এই কন্দগুলো অনেকটা আদার মতো দেখতে। একটি কন্দের দাম গড়ে ৪৫ টাকা। আর একটি কন্দ থেকে সাত থেকে আটটি শাখা বের হয়। একবার চাষ করলে চার বৎসর একই গাছ ফুল দিতে থাকে। একটি গাছের ঝাড় হতে প্রতি বছর গড়ে ৪০টি অধিক ফুল পাওয়া যায় এবং বাজারে এক একটি ফুলের দাম ৮-১০ টাকা। এক বিঘা জমিতে সার, কীটনাশক, বীজ ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে দশ লক্ষ টাকা খরচ হয়।

চাষ পদ্ধতি: পাঁচ থেকে ছয়টি চাষ দিয়ে মাটি টুকরো করে বেড তৈরি করতে হয়। প্রতিটি পরিমাণ মতো বালি এবং ছাই ছিটিয়ে দেয়ার পর সত্তর থেকে আশি বস্তা নারকেলের গুঁড়া ছোবড়া মাটির সঙ্গে মিশ্রণ করতে হয়। ছোবড়া মাটিতে মিশ্রণ করলে ফুলের গাছের শেখর দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে যেতে পারে। ফলে গাছ সুন্দর, স্বাস্থ্যবান হয় এবং প্রতিনিয়ত ফুল দিতে থাকে।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি: বিঘাপ্রতি পঞ্চাশ কেজি হাড়ের গুড়া, দুইশ’ কেজি কেঁচো সার, পঞ্চাশ কেজি টিএসপি সার, এমওপি পঞ্চাশ কেজি এবং রোবন ও দন্তা দুই কেজি করে প্রয়োগ করতে হয়। কন্দ রোপণের দশ থেকে বার দিন পূর্বে সকল প্রকার সার দিয়ে জমি তৈরি করে রেখে দিতে হবে। ফলে ফুলের গাছের কোনো ক্ষতি হয়না। প্রতিমাসে একবার কিংবা প্রয়োজনে দুইবার দুই বস্তা কেঁচো সার, পনের কেজি হাড়ের গুঁড়া ও পঁচিশ কেজি ডিএপি সার প্রয়োগ করতে হবে এছাড়াও প্রয়োজনে ইউরিয়া সার ও পাঁচ থেকে সাত কেজি পটাশ সার দেয়া যেতে পারে। এছাড়াও সামান্য ইউরিয়া ও পটাশ সার দিয়ে পনের কেজি সরিষার খৈল ভিজিয়ে পচিয়ে সারিতে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

সেচ পদ্ধতি: সপ্তাহে একবার করে সেচ প্রয়োগ করতে হয়। সেচের পানি যেন জমিতে আকটে থাকতে না পারে তার প্রতি খেয়াল রাখাতে হবে। সেইসাথে গাছ যেন অতিবৃষ্টি ও অতি খরায় নষ্ট হতে না পারে তার জন্য গাছের উপরে সেড তৈরি করে দিতে হবে। সেডের কারণে ফুলের রং কোনোভাবেই বিকৃত হয় না। বাঁশ কিংবা সিমেন্টের খুঁটি ও মোটা পলিথিন বা ঘন নেট দিয়ে এই সেড তৈরি করা যায়।

কীটনাশক প্রয়োগ: এই ফুলের রোগ-বালাই তেমন হয় না, কিছু ছত্রাক আক্রমণ করে থাকে। এই ফুলের বড় সমস্যা হচ্ছে মাইডস পোকা, যা কচিপাতা চুষে নেয় ফলে পাতা কুঁকড়ে যায়। বাজারে প্রচলিত ছত্রাক নাশক দশ দিন পর পর জমিতে স্প্রে করতে হয়। সেইসাথে কীটনাশক বছরে দশ থেকে বারবার স্প্রে করলে ফুল বড় হয়।

ফুল বাগানে কাজ করা এরশাদ নামের এক শ্রমিক জানান, আমি এক বছর যাবৎ এখানে কাজ করি। ফুল বাগানে কাজ করতে ভালো লাগে। মাসে পনের হাজার টাকা বেতনে আমার পরিবার অনেক ভালো আছে।

স্থানীয় বেশ কিছু নারী এই ফুল বাগানে কাজ করে যথেষ্ট সাবলম্বী। তাঁরা জানান, যেহারে জিনিসপাতির দাম বারিচ্চে বসে থাকলে কি পেট চলে বাবা? এটি হামরা সকাল ৮টাত থাকে বেলা ৪ডে পর্যন্ত ফুল তুলি, ফুল প্যাগেট করি, বাগানে ঘাস তুলি, প্রতিদিন ২৪০ টেকা (টাকা) পাই। এই টেকা দিয়ে হামাগেরে সংসারত মোটামুটি ভালোই হয়।

বাগানের মালিক তরুণ উদ্যোক্তা আশিকুজ্জামান জানান, আমরা কয়েকজন বন্ধুরা ইউটিউব দেখে বিদেশি এই ফুল চাষের চিন্তা করি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ১০ বছরের জন্য জমি লিজ নিয়ে ফুল চাষ পদ্ধতি শুরু করি। প্রাথমিকভাবে আনুমানিক ৪০ লাখ টাকা খরচ করে ১২৫ শতাংশ জমিতে ফুল চাষ করছি। এখন আমরা মাসে ৫০-৬০ হাজার ফুল ৬-৭ টাকা হিসেবে বগুড়া সহ উত্তরবঙ্গের সব জেলায় সরবরাহ করছি। তবে সরকার আমাদের দিকে প্রণোদনার হাত বাড়িয়ে দিলে আমরা ভালো কিছু করতে পারবো।

এ বিষয়ে শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর আলম জানান, বেশ কিছু তরুণ উদ্যোক্তা ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সবসময় তাদের সহায়তা প্রদান করে থাকি। তাদের সল্প সুদে ঋণ প্রকল্প দেওয়া হয়। সরকার ফুল চাষে কোন প্রণোদনা দিচ্ছেন না। তবে প্রণোদনা দিলে হয়তো তারা আরও উৎসাহিত হবে।

(এ আর)

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button