প্রধান খবরশেরপুর উপজেলা

বগুড়ায় সরকারি ওষুধ বিক্রি হচ্ছে স্বাস্থ্য সহকারির ফার্মেসীতে!

ওষুধের গায়ে লেখা ‘সরকারি সম্পদ বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ’। এরপরও রমরমা ব্যবসা চলছে বিক্রি নিষিদ্ধ ওইসব ওষুধের। খোদ সরকারি হাসপাতালের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য সরকারি বরাদ্দের সিংহভাগ ওষুধই চলে যাচ্ছে খোলাবাজারে। যা উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে ফার্মেসীগুলো। যা কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। অথচ বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য সরকারিভাবে ওষুধগুলো হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়।

সম্প্রতি বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারি মায়া খাতুন ও তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিক তাদের মালিকানাধীন জালাল ফার্মেসীতে হাসপাতালের সরকারি ওষুধ বিক্রিকালে হাতেনাতে ধরা খায়। মূলত এরপরই সরকারি ওষুধ বিক্রির রমরমা বাণিজ্যের বিষয়টি জানাজানি হয়। চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় শহরজুড়ে। পাশাপাশি বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্রের নানা অজানা কাহিনী।

সরকারি হাসপাতালের ওষুধ বিক্রির ঘটনায় ভুক্তভোগীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। চক্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সোমবার বিকেলে বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাকিব হোসেন এই অভিযোগটি করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মায়া খাতুন উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারি পদে চাকরির পাশাপাশি বাগড়া হঠাৎপাড়া বাজারে একটি ওষুধের ফার্মেসী পরিচালনা করে আসছেন। তবে ওই ফার্মেসীতে সার্বক্ষণিক থাকেন তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিক। তিনি ওষুধ কেনাবেচা করে থাকেন।

ওই ফার্মেসী থেকে প্রতিদিনই হাসপাতালের সরকারি ওষুধ বিক্রি করা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ২৪মার্চ একই গ্রামের নুরু হকের স্ত্রী সাজেদা বেগম ওষুধ কেনার জন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ ওই ফার্মেসীতে যান। সেখান থেকে কিছু ওষুধ কেনে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু দাম বেশি মনে হওয়ায় প্রতিবেশি লোকজনকে ওষুধগুলো দেখান। এসময় তার কেনা ওষুধ গুলোর মধ্যে বেশকিছু বিক্রি নিষিদ্ধ সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা ওষুধ পাওয়া যায়। পরে ঘটনাটি জানিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শাকিব হোসেনের নিকট সরকারি ওষুধগুলো জমা দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী সাজেদা বেগম বলেন, ফার্মেসী মালিক তার নিকট থেকে প্রত্যেকটি ট্যাবলেট-ক্যাপসুল পঞ্চাশ টাকা হিসেবে টাকা নিয়েছেন। আমি লেখাপড়া না জানা একজন নারী। তাই পড়তে জানি না। তাই কোনটি সরকারি আর কোনটি কোম্পানির এতকিছু বুঝি না। তবে বিনামূল্যের সরকারি ওষুধ তাকে দিয়ে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

ওই ওয়ার্ডের মেম্বার শাকিব হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা সেফিক্সিম-৪০০সহ বেশকিছু ওষুধ ওই ফার্মেসীতে কেনাবেচার সময় হাতেনাতে আটক করে স্থানীয় লোকজন। পরে ঘটনাটি জানতে চাইলে ওই ফার্মেসীর লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এমনকি আমাকে বলেন, সরকারি ওষুধ আমরা বিক্রি করব, তাতে তোমাদের কী, পারলে ঠেকাও।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারি মায়া খাতুন কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি। তবে তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের ফার্মেসীতে কোনো সরকারি ওষুধ বিক্রি হয় না। সামাজিক দ্বন্দ্বের জেরে তাদের বিরুদ্ধে এই ধরণের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান লিংকন অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করা হবে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এ আর)

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button