সংসদে বিদ্যুৎ নিয়ে বক্তব্যের ট্রল না করার আহ্বান মমতাজের
বিদ্যুৎখাতে সরকারের উন্নয়ন নিয়ে জাতীয় সংসদে দেওয়া নিজের পুরনো বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। আজ বুধবার সকালে নিজের ফেরিভায়েড ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে তিনি এর ব্যাখ্যা দেন।
এ সময় নিজের পুরনো বক্তব্যকে ‘ভুলভাবে উপস্থাপন’ না করার আহ্বান জানান এই সংগীতশিল্পী। তিনি মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর ও সদর) আসনের সংসদ সদস্য।
জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ নিয়ে তার বক্তব্যকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচার করে গুজব ছড়ানো প্রসঙ্গে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আজকে যে কথাটা বলার জন্য লাইভে এসেছি। সারা দেশের মানুষ সাময়িক একটা কষ্টের মধ্যে পড়েছি, সেটা হলো-বিদ্যুৎ। এ বিদ্যুৎ নিয়ে যেমন কষ্ট আছে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে নানা ধরনের কথা, আলোচনা-সমালোচনা ও প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। যেহেতু আমি এমপি, আমার এলাকায় কী কী কাজ করেছি, কী কাজ করা বাকি আছে, সেগুলো বলার একটি জায়গা হলো সংসদ। সংসদে আমি অনেক বক্তব্য দেই। তার দু’একটি কথা ধরে অনেকেই এটার সমালোচনার ঝড় তুলেছেন, এই কষ্টের মধ্যে। কারণ বিদ্যুৎ থাকছে না, বিদ্যুতের কষ্টটা সবাই পাচ্ছি, সেটা কম-বেশি। সবার ঘরেই আজকে এ সমস্যা আছে।’
বিদ্যুতের সমস্যা সাময়িক উল্লেখ করে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আপনারা জানেন, বিশ্বের কী অবস্থা। কিছুদিন আগে করোনা মহামারি গেল। তারপরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের অনেক ক্ষতির মধ্যে ফেলেছে। বড় বড় দেশও হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ তো ছোট্ট একটা দেশ। সেখানে সরকার চেষ্টা করছে, আমরাও চেষ্টা করছি। তারপরও আমাদের এই সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমি বলব-সেটা যেন আমরা ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার কিন্তু চেষ্টা করছে। আপনারা জানেন, গতকালও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এসব নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেছেন। সংসদে আলোচনা হচ্ছে। যে সমস্যাটা এ মুহূর্তে আছে, এটা সাময়িক। সরকার চেষ্টা করছে সাময়িক এ সমস্যা কাটিয়ে আমরা যেন আগামীতে বিদ্যুতের একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পারি।’
জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে দেওয়া পুরনো বক্তব্য প্রসঙ্গে মমতাজ বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি কেন বলেছিলাম সংসদে? তা আপনারা জানেন। এটা তো মিথ্যা কথা নয়, বিদ্যুৎ যে হারে সরকার উৎপাদন করেছে, ঘরে ঘরে লাইন দিয়েছে। সত্যিকার অর্থে সরকার প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেই প্রশংসা আমিও করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় আগে ৩০ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ ছিল। আমি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালনের সময় শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। এক সময় এলাকায় গেলে গ্রামের মা-বোনেরা এসে বলতেন-আপা, কিছু চাই না। আমাদের বিদ্যুতের লাইন দেন, মিটার দেন। মিটারের অভাবে বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। এই যে একটা সংকট ছিল, তখন সেটা কিন্তু আমরা সমাধান করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। মানুষ তখন খুশি হয়েছিল। সেজন্য সংসদে বলেছিলাম, মানুষ বিদ্যুৎ চাইত। এক সময় এ চাওয়ার ব্যাপারটা আর থাকবে না।’
‘সরকার যেভাবে বিদ্যুতের লাইন দিচ্ছে, উৎপাদন করছে, ঘরে ঘরে মিটার পৌঁছে দিচ্ছে। এখন কিন্তু সত্যিকার অর্থে গ্রামে গেলে কেউ বলে না–আপা, দুইটা মিটার দেন, পাঁচটা মিটার দেন। মিটার দেওয়ার জায়গা আসলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাই কিন্তু বাস্তবতা। আর সেই কথাটাই সংসদে আমি বলেছিলাম। সেটার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, ভুলভাবে উপস্থাপন করেন অনেকেই। অসাধু কিছু লোকজন খামোখাই দুটো বাজে কথা ফেসবুক-ইউটিউবে বলার চেষ্টা করছেন’, বলেন মমতাজ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি বিনীতভাবে বলব–আপনারা জ্ঞানী মানুষ হয়েও ভুল ব্যাখ্যা দেন, বাজেভাবে উত্থাপন করেন। দেখেন, আমার কথার সত্যতা আছে। আমি সঠিক সময়ে সঠিক কথাই বলেছিলাম। সাময়িক এ সমস্যা হবে এটা আপনি-আমি কেউ জানতাম না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফেসবুকে ঢুকে দেখি, হঠাৎ একজন বলছেন মমতাজের বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। কেন বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না, সেজন্য ঘেরাও করেছে। এই যে প্রোপাগান্ডা, মিথ্যাচার। এটা নিয়ে আপনাদের বিবেক কি একটুও নাড়া দেবে না? একজন মানুষের বিরুদ্ধে শুধু শুধু এভাবে মিথ্যাচার কেন করছি? আপনাদের বলব–শুধু মানুষকে হয়রানিমূলক কথা বলা, ছোট করা, মিথ্যা বলে তাকে হেনস্তা করা বিবেকবান মানুষের (কাজের) মধ্যে পড়ে না। এ ধরনের প্রোপাগান্ডা থেকে দূরে থাকবেন। মিথ্যাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবেন না। ধৈর্য ধরুন, আমাদের সঙ্গে থাকুন।’
শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে মমতাজ বলেন, ‘আমরা কী জানতাম পাকিস্তানের এ অবস্থা হবে? শতভাগ শিক্ষিতের দেশ শ্রীলংকা, সেই দেশের মানুষের এমন করুণ পরিস্থিতি হবে? আমরা কিন্তু জানতাম না। আমরা অনেক কিছুই জানি না। কখন যে কী হয়, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানেন না। যখন আমি সংসদে কথাগুলো বলেছিলাম, সত্যিই আমাদের বিদ্যুতের অবস্থা এত সুন্দর ও ভালো ছিল। সে সময় শতভাগ বিদ্যুতায়ন আমার আসনে করেছি, মানুষকে বিদ্যুতের লাইন দিতে পেরেছি।’