বগুড়ার হোটেল সিয়েস্তার অন্ধকার জগৎ

মাসুম হোসেন (নিজস্ব প্রতিবেদক): বগুড়ার হোটেল সিয়েস্তার নাম জানেন না-এমন লোকজনকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের ধারে ফুলদিঘী এলাকায় ওই হোটেলের অবস্থান। শুরুতে সুনাম অর্জন করলেও বর্তমানে অভিযোগের শেষ নেই তিন তারকা এই হোটেলের বিরুদ্ধে। ডিজে পার্টির নামে সেখানে হয় অশ্লীল নৃত্য। এছাড়া রয়েছে নারীদের দিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ করানোর অভিযোগও।
বগুড়া লাইভের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে হোটেল সিয়েস্তার ডিজে পার্টির অশ্লীল চিত্র। বেশ কয়েকজন নিয়মিত সেখানে ডিজে পার্টির আয়োজন করেন। আয়োজকদের মধ্যে রাকিব ও মাসুদ নামে দুজনের নাম জানা গেছে। তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রতিটি ডিজে পার্টিতে ৩০-৫০ জন নারী-পুরুষ থাকেন। এতে অংশ নেয়া মেয়েদের বয়স ১৬-২৬ এর মধ্যে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই স্থানীয় নৃত্য শিল্পী। এছাড়াও কলেজছাত্রীও রয়েছেন।
শুধু ডিজে পার্টিতেই সিয়েস্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নয়। এ হোটেল যেন এক মিনি পতিতালয়ে পরিণত হয়েছে। সেখানে জুয়ার আসরও বসে।
অশ্লীল ডিজে পার্টি
ডিজে পার্টিতে যারা অংশ নেবেন আগেই তাদের তালিকা করা হয়। সেই তালিকায় নাম থাকতে হলে দিতে হয় ১৫০০-২০০০ টাকা। এভাবেই আয়োজকরা এই পার্টির সদস্য সংগ্রহ করেন। সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর ভাড়া নেওয়া হয় হোটেল সিয়েস্তার মিনি হলরুম। একই সঙ্গে চুক্তি করা হয় ৮-১০ জন মেয়ের সঙ্গে। প্রতিটি ডিজে পার্টি ৪-৫ ঘণ্টাব্যাপী করা হয়। সেই আয়োজনে চলে অশ্লীল নৃত্য। থাকে মদ, গাঁজার ব্যবস্থাও। ওই সময় মেয়েদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগও থাকে। তবে এক্ষেত্রে ডিজে পার্টির সদস্যদের গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা। কাউকে পছন্দ হলে হোটেল রুমে গিয়ে তারা ঘনিষ্ঠ হন।
হোটেল সিয়েস্তার প্রতিষ্ঠা হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় আগে। প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর থেকেই সেখানে অশ্লীল ডিজে পার্টি আয়োজন করা হয়। তবে ওই সময়গুলোতে খুব কমই অনৈতিক কার্যকলাপ হত। বছরখানেক হলো পুরোদমে অশ্লীল ডিজে পার্টির আয়োজন শুরু করে হোটেল কতৃপক্ষ।
নারী, জুয়া ও মদ
হোটেল সিয়েস্তার বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগও নতুন নয়। বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও ব্যক্তির মাধ্যমে তারা নারী সংগ্রহ করে সিয়েস্তায় রাত কাটানো অতিথিদের জন্য। টাকার বিনিময়ে সেই নারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটান অতিথিরা। এমনকি মদও সরবরাহ করা হয় তাদের জন্য। এছাড়াও সপ্তাহে দুই-একদিন সিয়েস্তায় তাস দিয়ে জুয়ার আসর বসানো হয়। সেখানে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা চলে।
গোপন এক সূত্র বলছে, হোটেল সিয়েস্তায় সব ধরণের অবৈধ কার্যকলাপই হয়। বর্তমানে এসবের ব্যবস্থা করছেন সেই হোটেলের ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা ইমরান। নারী, মদ ও জুয়ারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনই তিনি। ডিজে পার্টিরও ব্যবস্থা তিনিই করেন। সিয়েস্তার চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সিটন ঢাকায় থাকেন। অনৈতিক কার্যকলাপের টাকার ভাগ তার কাছে চলে যায়।
জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান সিটন বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। হোটেল দেখাশোনা করেন ইমরান। আমার হোটেলে অবৈধ কিছু হওয়ার কথা নয়। এরপরেও আপনি ইমরানের সঙ্গে একবার কথা বলেন।
হোটেল ম্যানেজার ইমরানের সঙ্গে মুঠেফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে দেখা করতে বলেন। পরবর্তীতে সিয়েস্তার বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।
জানতে চাইলে বগুড়া কৈগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মোর্শেদুল আলম বলেন, হোটেল সিয়েস্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও আমরা সেখানে অভিযান চালানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিন তারকা হোটেল হওয়ার কারণে বিভিন্ন বাধা থাকে। অনুমতি নিয়ে হোটেলে যেতে হয়। ততক্ষণে কিছুই পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি সিয়েস্তায় অভিযান চালানো হয়েছে। আমরা তেমন কিছু পাইনি। হোটেল কতৃপক্ষ এখন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আমরা ওই হোটেল নজরদারিতে রেখেছি। তারা এবার পার পাবে না।