বগুড়ায় কাঠের চাকায় চাঁদাবাজি

মাসুম হোসেন: কাঠবাহী ট্রাক নিয়ে উত্তরবঙ্গ পার হতে হলেই দিতে হয় চাঁদা। দিনেরাতে মহাসড়কে ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করছেন বন বিভাগের বাগান মালিরা। ট্রানজিট পাসের বিনিময়ে দীর্ঘ বছর ধরে এভাবেই চাঁদা তোলা হচ্ছে।
জানা গেছে, উত্তরবঙ্গ ছাড়তে ট্রানজিট পাস নিতে হয় কাঠ বহনকারী ট্রাক চালকদের। বগুড়া ও জয়পুরহাটের ছয়টি পয়েন্টের যেকোনো একটি থেকে ট্রানজিট পাস সংগ্রহ করতে হয়। যা বিনামূল্যে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও টাকা নেন বাগান মালিরা। পরে সেই টাকা ভাগভাগি করে নেন বন কর্মকর্তারা। টাকার ভাগ পান বাগান মালিরাও।
বগুড়ার বেতগাড়ী, নন্দীগ্রাম ও দুপচাঁচিয়ার বাসস্ট্যান্ড, মোকামতলা, শেরপুরে ধুনট মোড় এবং জয়পুরহাটের গুলশান মোড় থেকে বনজদ্রব্য চলাচল পাস (ট্রানজিট পাস) দেওয়া হয়। এই পাশের বিনিময়েই ট্রাক চালকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা নেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ট্রানজিট পাসের বিনিময়ে উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রাকের চালকের কাছ থেকে ৭০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। বগুড়া ও জয়পুরহাটের ছয়টি পয়েন্ট দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ৫০ টি কাঠবোঝাই ট্রাক উত্তরবঙ্গ ছেড়ে যায়। এসব ট্রাকে ট্রানজিট পাস দেওয়ার নামেই আদায় করা হয় টাকা। শুধু তাই-ই নয়, বগুড়া ও জয়পুরহাটের পর সিরাজগঞ্জে দিতে হয় ১০০ টাকা। আর টাঙ্গাইলে সামাজিক বন বিভাগের লোকজনকে দিতে হয় আরও ১৯০০ টাকা।
নন্দীগ্রাম উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কাঠবাহী ট্রাক থেকে ট্রানজিট পাসের বিনিময়ে টাকা আদায় করেন আব্দুল জলিল। তিনি সামাজিক বন বিভাগের নন্দীগ্রাম কার্যালয়ের বাগান মালি।
তিনি বলেন, প্রতিটি কাঠবাহী ট্রাক থেকে ৭০০ টাকা করে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ট্রাক প্রতি ৫০ টাকা করে দেওয়া হয়। আর বাকি টাকা তিনি অফিসে জমা দেন। সেই টাকার ভাগ বগুড়া বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, ট্রাক প্রতি ৫০ টাকা দিয়ে আমাদের চলে না। আমাদের টাকা বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকবার বলা হয়েছে।
বগুড়ার বেতগাড়ী এলাকায় ট্রানজিট পাস দেওয়ার নামে টাকা আদায় করেন সামাজিক বন বিভাগের বগুড়া সদর কার্যালয়ের বাগান মালি রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ট্রানজিট পাসের বিনিময়ে ট্রাক চালকরা শুধু চা-পান খাওয়ার টাকা দেন।
ট্রাক চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি কাঠবাহী ট্রাককে তিন স্থানে মোট ২৭০০ টাকা দিতে হয়। ট্রানজিট পাস দিয়ে এসব টাকা নেন সামাজিক বন বিভাগের লোকজন।
জানতে চাইলে সামাজিক বন বিভাগের বগুড়া কার্যালয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মতলুবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ট্রানজিট পাসের বিনিময়ে টাকা আদায়ের বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।
কাঠবাহী ট্রাক থেকে আদায় করা টাকার ভাগ তাকেও দেওয়া হয়- এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুস্পষ্ট কোনো জবাব দেননি তিনি।