প্রধান খবরশাজাহানপুর উপজেলা

বগুড়ায় ভাইয়ের লাশ রেললাইনে, মায়ের লাশ বস্তায়; এবার ‘টার্গেট’ জাহিদুল?

মাসুম হোসেন: ছেলে জাহিদুলের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন খুকি। এর দুদিন পর বস্তায় মেলে তার লাশ। তাও দুই পা বিহীন। পরে পাশের ডোবায় পাওয়া গেল তার একটি পা। ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও সন্ধান মেলেনি তার আরেক পায়ের।

৮৫ বছরের খুকি বেগম। তাকেও হতে হলো নৃশংস খুনের শিকার। কিন্তু কেন? তা জানতে তদন্ত করছে পুলিশ। তবে লাশের সূত্র ধরে উঠে আসে রোমহষর্ক এক ঘটনা। ঘটনাটি বছর দশেক আগের।

খুন হন খুকির সতীনের ১৫ বছর বয়সী ছেলে বিপুল। তার লাশ মেলে নিখোঁজের দুদিন পর। শরীর জুড়ে ছিল তার খুনিদের নৃশংসতা। এই দুই হত্যাকাণ্ডই ‘এক সূত্রে গাঁথা’। এমন দাবি স্বজনদের।

পরিবারে সবার ছোট ছিল বিপুল। ভালোবাসার কমতি ছিল না তার জীবনে। একই গ্রামের হাবিবুর রহমান হাবিব তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। এরপরে সে আর ফিরে আসেনি। রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয় তার ক্ষতবিক্ষত লাশ।

স্বজনরা বলছেন, বিপুলকে অপহরণের পর মুঠোফোনে একবার মুক্তিপণ চাওয়া হয়। ছোটভাইকে বাঁচাতে মুক্তিপণ দিতেও রাজি ছিলেন জাহিদুল ইসলাম। কিন্তু পরবর্তীতে অপহরণকারীদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এর দুদিন পর বগুড়া সদরের কৈচর এলাকার রেললাইনে পাওয়া যায় বিপুলের নিথর দেহ। তার বুকে ৪৫-৫০টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল।

লাশ উদ্ধারের পর এ ঘটনায় মামলা করেন জাহিদুল। আর এ মামলায় স্বাক্ষী ছিলেন ওই বৃদ্ধা। তার সামনে থেকেই অভিযুক্ত হাবিব বাড়ি থেকে বিপুলকে ডেকে নিয়ে যান।

খুকি ও বিপুলের স্বজনদের দাবি, বিপুল হত্যা মামলার আসামিরাই খুকিকে খুন করেছেন। কারণ, ওই মামলার গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষী ছিলেন খুকি। তিনি পায়ে হেঁটে আদালতে স্বাক্ষী দিতে যান- এ কারণে তার দুই পা কেটে নেন হত্যাকারীরা।

নিহত বিপুল ও খুকি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের জোড়া তালপুকুর গ্রামের বাসিন্দা। খুকির স্বামীর নাম খোরশেদ আলম। বিপুল হত্যাকাণ্ডের আসামি হাবিবসহ অন্যরা একই ও আশপাশের গ্রামের বাসিন্দা। হাবিবের বাবার নাম বাবলু। তিনিও বিপুল হত্যা মামলার আসামি। এই মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। আর এরমধ্যেই খুন হলেন স্বাক্ষী খুকি।

গত ৪ আগস্ট (শুক্রবার) বেলা ১২ টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া তালপুকুর গ্রাম থেকে খুকির দুই পাবিহীন বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এর পাশেই এক ডোবায় পাওয়া যায় তার একটি পা। পরবর্তীতে নিহত খুকির ছেলে সাইফুল ইসলাম ওই দিন রাতেই এ ঘটনায় শাজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

নিহত খুকির ছেলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ২ আগস্ট, (বুধবার) বিকেলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন মা। তিনি মাঝে মধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেয়েদের বাড়িতে গিয়ে থাকেন। এছাড়াও বিভিন্ন মাজারে যান তিনি। আমরা ভেবেছিলাম ওই দিন হয়ত আমার কোনো বোনের বাড়িতে যাচ্ছেন তিনি। এজন্য আমরা চিন্তিত ছিলাম না।

তিনি আরও বলেন, লোকমুখে জানতে পারি বস্তাবন্দি এক নারীর লাশ উদ্ধারের কথা। সেখানে গিয়ে মায়ের মরদেহ শনাক্ত করি আমরা।

জাহিদুলের ধারণা, গত ২ আগস্ট তার মাকে হত্যা করা হয়েছে।

জাহিদুলের ভাই আপেল মাহমুদ ও আরিফুর জানান, বিপুল হত্যা মামলার বাদী জাহিদুল। এখন জাহিদুলের জীবনও হুমকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় তাকেও খুন করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিপুল হত্যা মামলার অন্যতম আসামি হাবিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে খুকি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাজাহানপুর থানার এসআই জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, খুকি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। মামলার তদন্ত চলছে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button