বগুড়ায় ‘শত শত’ পরিবার গৃহ ও ভূমিহীন

মাসুম হোসেন: ভালোভাবে খোঁজ খবর না নিয়েই এক উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ইউএনওর কাছে স্মারকলিপি দেয় দুই সংগঠন। এরপরই টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসনের। গৃহ ও ভূমিহীন ঘোষণার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায় প্রশাসন। একই সঙ্গে স্মারকলিপি দেওয়া সংগঠন দুটিকে ভূমি ও গৃহহীনদের তালিকা দিতে বলা হয়।
এমন ঘটনা বগুড়ার শেরপুর উপজেলার। আজ বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে ভূমি ও গৃহহীনদের প্রাথমিক তালিকা জমা দেয় বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের উপজেলা শাখা। সেই তালিকায় ২৬০ পরিবারকে ভূমি ও গৃহহীন বলা হয়েছে।
এর আগে, গত ১৭ জুলাই সকালে শেরপুরকে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। পরে ঐদিন দুপুরেই এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় ওই দুই সংগঠন। উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করার আগে ভালোভাবে খোঁজ নেওয়ার দাবি জানায় সংগঠন দুটি। পরবর্তীতে চূড়ান্তভাবে শেরপুরকে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়নি।
যা ঘটেছিল ১৭ জুলাই
ওই দিন বেলা ১১ টার দিকে আলোচনা সভা করে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার সভাকক্ষে এ আয়োজন করা হয়। সেখানে শেরপুরকে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বলা হয়, সরকারি প্রকল্পের আওতায় শেরপুরে এ পর্যন্ত ৫০১টি ঘর দেওয়া হয়েছে। এখন এই উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হলো। এরপরেও যদি এ ধরনের (ভূমি ও গৃহহীন) কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায় তাদেরকে পুনর্বাসন করা হবে।
সেদিন অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউএনও সানজিদা সুলতানা। সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবর রহমান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিলুফা ইয়াসমিনসহ আরও অনেকে।
গত ৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় মুজিববর্ষের ৪র্থ পর্যায়ের (২য় ধাপ) গৃহ হস্তান্তরের উদ্বোধন করেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঐদিনই এ উপজেলাকে চূড়ান্তভাবে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হত। সবঠিকই ছিল। তবে বিপত্তি ঘটে ওই দিন দুপুরে। উপজেলার সকল ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর ও জমি বরাদ্দের দাবিতে স্মারকলিপি দেয় ওই দুই সংগঠন।
সংগঠন দুটির দাবি, শেরপুরে এখনো অনেক ভূমি ও গৃহহীন পরিবার আছে। এরমধ্যে মাত্র ৫০১ পরিবারকে ভূমি ও গৃহ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ উপজেলা শতভাগ ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত হয়নি। এ অবস্থায় শেরপুরকে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা অন্যায়।
এমনকি উপজেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে তীব্র নিন্দা জানায় সংগঠন দুটি।
সংগঠন দুটি থেকে জানানো হয়, উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন ঘোষণা করার আগে প্রতিটি গ্রামে গিয়ে জরিপ করতে হবে। পরবর্তীতে সংগঠন দুটির প্রতিবাদে উপজেলা প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায়। ফলে গত ৯ আগস্ট এ উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়নি।
আজ উপজেলা প্রশাসনকে ভূমি ও গৃহহীনদের প্রাথমিক তালিকা জমা দেয় বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন সংগঠন। ইউএনও সানজিদা সুলতানা অনুপস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এ তালিকা গ্রহণ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির শেরপুরের সভাপতি আব্দুস সামাদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন কেন্দ্র কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত মাহাতো, শেরপুর উপজেলার সভাপতি কমল সিংসহ আরো অনেকে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের কেন্দ্র কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত মাহাতো বলেন, ভালোভাবে খোঁজ খবর না নিয়েই উপজেলা প্রশাসন শেরপুরকে চূড়ান্তভাবে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময় আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। তখন আমাদের কাছে ভূমি ও গৃহহীনদের তালিকা চায় উপজেলা প্রশাসন। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে প্রাথমিকভাবে ২৬০ জনের একটি তালিকা হস্তান্তর করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের করা ২৬০ পরিবারের বাইরেও আরও অনেক ভূমি ও গৃহহীন রয়েছেন। আমরা তাদের তালিকা সংগ্রহ করছি। আমরা চাই এ উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন ঘোষণা করার আগে যেন নিশ্চিত হয় উপজেলা প্রশাসন।
জানতে চাইলে ইউএনও সানজিদা সুলতানা বলেন, গত ১৭ জুলাই শেরপুর উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে ঐদিন বলা হয়েছিল পরবর্তীতে ভূমি ও গৃহহীন কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে পাওয়া গেলে পুনর্বাসন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দুটি সংগঠন ২৬০টি পরিবারের তালিকা দিয়েছে। তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর পরিবারও রয়েছে। অথচ তাদের জন্য আলাদা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। আর ওই তালিকায় থাকা অন্যদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।