বগুড়ায় আটক ট্রাকের চাল ‘গায়েব’: বৈধ মোড়কে ‘অবৈধের সীল’
মাসুম হোসেন: দিন সাতেক আগে বগুড়ায় চাল ভর্তি এক ট্রাক আটক করে পুলিশ। চালের বস্তায় ছিল সরকারি সীল। পরে সেগুলো জব্দ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা হয় মামলা। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। তবে পুলিশের এই অভিযান ঘিরে দানা বেঁধেছে রহস্য।
চাল উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় অভিযোগ তোলা হয় সরকারি চাল কালোবাজারি, অবৈধ মজুত ও এসব কাজে সহায়তার। কিন্তু এখন পুলিশের বিরুদ্ধেই পাল্টা অভিযোগ উঠেছে ট্রাক থেকে কিছু চাল গায়েবের। তবে অভিযোগের শেষ এখানেই নয়। চালগুলো বৈধ ছিল বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এর যথেষ্ট প্রমাণ দেখানোর পরেও সেগুলো অবৈধ দাবি করে মামলা করা হয়। বস্তায় খাদ্য অধিদফতরের সীল থাকলেও সেগুলো বাজারে কেনাবেচার চাল। ব্যবসায়ীদের গোডাউনে এমন শত শত বস্তা ভর্তি চাল রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি রেশন ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের বস্তায় একই রকমের সীল থাকে। ফলে বস্তা দেখে বোঝার উপায় নেই যে কোনটা কিসের চাল। একারণে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
গত ২৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী এলাকায় চালবোঝাই এক ট্রাক আটক করা হয়। চালবোঝাই ওই ট্রাকটি আটক করেন বাগবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই ইফতেখায়রুল ইসলাম।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সেগুলো খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নয়, সরকারি রেশনের চাল। এরপরেও পুলিশ চাল জব্দ করে মামলা দেয়।
চাল আটকের ঘটনায় ঐদিনই এসআই ইফতেখায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে গাবতলী মডেল থানায় মামলাটি করেন। তার করা মামলায় মোট পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন- বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার হেলেঞ্চাপাড়ার রাকিবুল হাসান রোহান (২২), বড় চান্দাই মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নিরব হোসেন (২২) ও গাবতলীর বালিয়াদিঘী নাংলাপাড়ার বাসিন্দা ইউনুছ আকন্দ (৫৫), একই উপজেলার কুটামহীন গ্রামের মন্তেজার (৩৫) ও বগুড়া সদরের নাটাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হোসেন (২৮)।
তাদের মধ্যে রোহান ট্রাকচালক ও নিরব তার সহকারী। মন্তেজার চাল ব্যবসায়ী এবং ইউনুছ ও নাজমুল তার সহায়তাকারী।
ইউনুছের বাড়ি থেকে ট্রাকবোঝাই করে চালগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় নেয়া হচ্ছিল।
অভিযুক্তদের মধ্যে ট্রাক আটকের সময় ঘটনাস্থল থেকে রোহান, নিরবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের কথা অনুযায়ী রাতেই নিজ বাড়ি থেকে ইউনুছকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের করা মামলায় বলা হয়, উদ্ধার করা চালের ২৭৬টি বস্তায় (প্রতিবস্তায় ৩০ কেজি করে চাল) খাদ্য অধিদফতের সীলসহ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ লেখা আছে। আর ২৪ বস্তার উপরে (প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে চাল) ইংরেজিতে GOVT.OF THE PEOPLEOS REPUBLIC OF BANGLADESH DIRECTORATE OF FOOD MINISTRY OF FOOD, NET WT.50 KGS লেখা আছে। আটকের পর ট্রাকচালক ও তার সহকারী চালগুলোর বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি। একই সঙ্গে চালের বৈধ চালানো দেখাতে পারেননি তারা। একারণে সেগুলো জব্দ করা হয়।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বি-ব্লক এলাকার রেশন ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জানান, গত ১০ আগস্ট মন্তেজার তার কাছ থেকে ১২ হাজার কেজি চাল কেনেন। সেই চালেরই এক চালান আটক করে পুলিশ। অথচ চালগুলো বৈধ ছিল। চালের বস্তায় সরকারি সীলসহ ইংরেজি যা লেখা রয়েছে তা থাকবেই। কারণ সেগুলো সরকারি রেশনের চাল। তার কাছে আরও অনেক চালের বস্তা রয়েছে। যেগুলোতে খাদ্য অধিদফতরের সীল আছে।
তিনি আরও বলেন, চাল আটকের অভিযানে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাকে চালের যথেষ্ট প্রমাণ দেখানো হয়েছে। এরপরেও মামলা করা হয়।
আব্দুল খালেক দাবি করছেন, ট্রাক আটকের পর সেখান থেকে ১ হাজার ৮০ কেজি চাল গায়েব করে পুলিশ। ট্রাকে মোট ৩৫২ বস্তা চাল ছিল। কিন্তু ছোট-বড় মিলে ৩০০ বস্তা চাল জব্দ দেখানো হয়েছে।
জানতে চাইলে এসআই ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীরা চালের বৈধ কাগজ এখনো দেখাতে পারেন। কারণ মামলাটির তদন্ত চলছে।
চাল গায়েবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩০০ বস্তা চালই আটক করা হয়। এর বেশি চাল ওই ট্রাকে ছিল না। চাল গায়েবের মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।
এ মামলার তদন্ত করছেন গাবতলী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মোন্নাফ।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, চালের বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ায় মামলা হয়েছে। স্বাক্ষীদের উপস্থিততে ৩০০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। আর এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।