পুলিশের যত নারী কেলেঙ্কারি

অতিসম্প্রতি ডিএমপির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের সঙ্গে ডিএমপির সদর দফতরে কর্মরত সানজিদা আফরিন নিপার অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সানজিদার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনের সঙ্গে এডিসি হারুনের দ্বন্দ্ব হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে বেদম মারধর করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাহিনীতে এক ধরনের অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত কয়েক বছরে এ ধরনের কেলেঙ্কারিতে যাদের নাম বেশি আলোচনায় এসেছে তাদের মধ্যে ডিআইজি মিজান, পুলিশ সুপার মোকতার ও এডিসি সাকলায়েনের নাম উল্লেখযোগ্য।
এর আগে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে কর্মসংস্থান ব্যাংকের কর্মকর্তা ইকো নামের এক নারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিয়ে করেন ডিআইজি মিজান। পরে ইকোকে শর্ত দেওয়া হয় ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিয়ের তথ্য গোপন রাখার। ইকো তা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে মিজান পুলিশ পাঠিয়ে ইকোকে গ্রেফতার করান। ডিআইজি মিজান বগুড়া, রমনা ও মোহাম্মদপুর থানার পুলিশকে ব্যবহার করে ইকো ও তার পরিবারকে হয়রানি করেন। তল্লাশির নামে ইকোর লালমাটিয়ার বাসা তছনছ করে তার মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, লেখাপড়া ও চাকরি-সংক্রান্ত সব কাগজপত্র নিয়ে যায় পুলিশ।
বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেশ কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। ডিআইজি মিজানের আরও নারী কেলেঙ্কারির তথ্য পাওয়া যায় ওই সময়। এক সংবাদ পাঠিকাসহ কয়েক নারীর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক থাকা দাবি করেন ইকো ও তার মা। মিজানের ফাঁদে পড়ে অনেক নারীর সংসার ভেঙেছে বলেও দাবি করেন তারা। এর প্রমাণ হিসেবে ফোনালাপের রেকর্ডও সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন তারা। এর জেরে এক পর্যায়ে ডিআইজি মিজানের অবৈধ অর্থ সম্পদের হিসাবের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে দুদক। ওই মামলায় তাকে ১৪ বছরের সাজা দেন আদালত।
২০১৯ সালের মে মাসে সুদানে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের কন্টিনজেন্টের কমান্ডার পুলিশ সুপার মোকতার হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে এক নারী কর্মকর্তার। সেখানে থাকা অবস্থায় ওই নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান তিনি। এসপি মোকতার দেশে আসার পর তাকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে বদলি করা হয়। দেশে ফিরে ২০২১ সালের ১২ আগস্ট ওই নারী মোকতার হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করলে তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে থানাকে নির্দেশ দেন ঢাকার একটি আদালত।
২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর দুপুরে আসামি বাদীর বাসায় গিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন পরে এবং ভুয়া বিয়ে করে আরও বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেন। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে আনুষ্ঠানিকভাবে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার তাগিদ দিলে মোকতার হোসেন বাদীর সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এবং তাকে এড়িয়ে যেতে থাকেন।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ অফিস কাম বাসার একটি কক্ষে মেয়েদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় সহকারী পুলিশ সুপার মোহা. আবদুর রকিব খানকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশাল সার্কেলে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অফিস কাম বাসার একটি কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে মেয়েদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসার অভিযোগ ওঠে।
২০২১ সালে আলোচিত অভিনেত্রী পরীমণির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় সামনে আসার পর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েনকে। পরে তাকে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়। এর আগে পরী মণির বিরুদ্ধে র্যাবের করা একটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ওই মামলার সূত্র ধরেই পরীমণির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এডিসি সাকলায়েনের।