জাতীয়দিবসপ্রধান খবর

মহান বিজয় দিবস আজ

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিলো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন এবং অর্থনৈতিক মুক্তি, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, জাতীয় অধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। আজকের দিনে সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়। জাতি বিজয় অর্জন করে। সেই মহান বিজয় দিবস আজ।

৩০ লাখ গণমানুষের আত্মত্যাগ এবং দুই লাখ ৩৬ হাজার মা-বোনের নারীত্বের লাঞ্ছনার বিনিময়ে এই বিজয় অর্জিত হয়। জান মাল আর ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের দেশ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। আমরা আমাদের মুখের ভাষাও প্রতিষ্ঠা করেছি রক্তের বিনিময়ে। এ দিক থেকে বাঙালি এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের গর্বে গর্বিত।

তাই বিজয় দিবসের এই শুভক্ষণে আমাদের প্রত্যেককে এমন শপথ নিতে হবে যে, আমাদের কোনো কাজে বা আচরণে শহীদদের বিদেহী আত্মা এবং আমাদের লাঞ্ছিত মা-বোনেরা যেনো কষ্ট না পায়। আমাদের অবস্থান ধর্মনিরপেক্ষতা, মুক্তবুদ্ধি, মানবতা, জাতীয় সংস্কৃতি ও মাতৃভাষার পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার ভিত্তিতে বৈচিত্র্যের মধ্যেও স্বাতন্ত্র বজায় রেখে জাতির সামগ্রিক স্বার্থ, জাতীয় মূল্যবোধ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা ও একের পর এক সামরিক শাসন মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ধ্বংস ও বিকৃত করতে থাকে। শাসকগোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতাকেই একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে নিজেদের মধ্যে বিরোধের জন্ম দেয়। অশুভ শক্তি এ হানাহানির ফাঁকে আমাদের চেতনার বিকাশ অসাড় করে দেয়। চক্রান্ত শুরু করে।

স্বাধীনতার অর্থ ছিলো মানুষের আত্মার মুক্তির সাথে সাথে আর্থিক মুক্তি। অর্থাৎ আর্থিক উন্নতির পথ সুগম করা। একই সাথে শিক্ষা সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্যের উন্নতিও যদি যথাযথভাবে কার্যকর না করতে পারি তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথাটা শিশুপাঠ্য কাহিনীতেই থাকবে। মহান বিজয় দিবসের উৎসব-আনন্দের সময় আমরা প্রতিবছর অহংকার করে বলেছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা সমুন্নত রাখবো। আমরা যে যেখানে যে অবস্থানে আছি সেখানে নিজের সততা, কর্মনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে তা সহজেই করতে পারি। মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বুলি আউড়িয়ে কোনো ফায়দা হবে না। কখনো তা হয়নি।

জাতির অতীত ইতিহাস, গৌরবগাথা এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে মূল্যবোধগুলো আমরা অর্জন করেছি, সম্মিলিতভাবে তা আমাদের জাতীয় উত্তরাধিকার। এটি অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে। দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় নীতির ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। সেটাই হবে প্রকৃত বিজয়।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button