আইন ও অপরাধ

ভুয়া এফিডেভিটে ধর্ষণের আসামির জামিন, আইনজীবীকে তলব

বিয়ের ভুয়া এফিডেভিট তৈরি করে ধর্ষণের আসামিকে জামিন পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে নাজমুল হোসেন পপন নামে এক আইনজীবীকে কারণদর্শানোর জন্য তলব করেছেন আদালত।

অভিযুক্ত আইনজীবী প্রায় দু বছর আগে ধর্ষণের শিকার ১২ বছরের এক শিশুর বয়স বেশি দেখিয়ে আসামির সঙ্গে বিয়ের এফিডেভিট করেছিলেন।

চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি সেই মামলার এক শুনানিতে বিষয়টি উঠে আসলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আশিকুল খবির এই আদেশ দেন।

অভিযুক্ত নাজমুল হোসেন পপন নোটারী পাবলিক আইনজীবী ও বগুড়া জেলা জজ আদালতে ওকালতি করেন। আগামী ৩ মে স্বশরীরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালতে হাজির হয়ে নিজের পক্ষে ব্যাখ্যা দিতে হবে আইনজীবী নাজমুল হোসেন পপনকে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বগুড়া সদরের ইউসুফ আলী প্রামানিক (৪০) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়।মামলার বাদি ছিলেন শিশুটির মা।

মামলার নথি ঘেঁটে জানা যায়, আসামি ইউসুফ আলী বগুড়া সদর উপজেলার গোবর্ধনপুর গ্রামের বাসিন্দা। ধর্ষণের শিকার শিশুটি তার প্রতিবেশি। ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল ১২ বছরের শিশুটিকে একা পেয়ে রাস্তা থেকে ধরে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে ভয়ভীতি দেখিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করেন আসামি।পরবর্তীতে জোর করে শিশুটির কাছে থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন ইউসুফ।

বিষয়টি জানাজানি হলে শিশুটির মা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে একই বছরের ১৯ অক্টোবর শিশুটির মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয়া হয়। ডা. রোকসানা খাতুনের ওই প্রতিবেদনেও ধর্ষণের প্রমান মিলে। এই মামলার তদন্তকর্মকর্তা ছিলেন ফুলবাড়ী ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক সুজন মিঞা। তার তদন্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা মিলে।

তদন্ত কর্মকর্তা তার চার্জশিটে বলেছেন, ধর্ষণের ঘটনা আংশিক জানাজানি হলে ২০২১ সালের ৩ মে ওই শিশুকে ফুসলিযে এফিডেভিট মূলে বিয়ে করেন আসামি ইউসুফ আলী।

অভিযোগ উঠেছে, ওই এফিডেভিটে ধর্ষণের শিকার ১২ বছরের ওই শিশুর বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর। আসামি ধর্ষণের শিকার শিশুটির সঙ্গে সংসার করছে এমন দোহাই দেখিয়ে মামলার কিছুদিন পরেই জামিন পেয়েছিলেন। জামিন পাওয়ার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে আসামি ইউসুফ আলী বিদেশে পালিয়ে যান।

আর এই এফিডেভিট করেন নোটারী পাবলিক আইনজীবী নাজমুল হুদা পপন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুনানি হলে ধর্ষণের শিকার ওই শিশু আসামি ইউসুফকে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে।

এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বলেন, ২১ সালে আসামি ইউসুফ আলী জামিন পায়। জামিনের বিষয়টি আমরা বুঝতে পারিনি। তবে জামিনের কয়েকদিন পর এলাকায় তাকে বুঝেছিলাম ও জামিন পেয়েছে।এখন লোকজনের মুখে শুনি ইউসুফ মালয়শিয়াতে আছে।

গত দু বছর ধরে বিচারের আশায় তারা আদালত পাড়ায় শুধু আসা-যাওয়া করছেন বলে জানান শিশুটির বাবা। তার দাবি, শুনানির দিনগুলো আদালতে এসে বসে থাকেন, পরে শুনেন নতুন করে তারিখ দেয়া হয়েছে।

কারণ দর্শানোর খবর শুনেছেন বলে জানান আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা পপন। তবে তার কাছে এখনও আদেশের কপি আসেনি। অভিযোগে নিজের দায় অস্বীকার করে নাজমুল হুদা বলেন, এফিডেভিটে অন্য একটি মেয়ের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। নাবালিকা শিশুর ছবি বা সে নিজে থাকলে বিষয়টি জানতে পারতাম। আর আমি নোটারী পাবলিক আইনজীবী হিসেবে এফিডেভিট স্বাক্ষর করি। এফিডেভিটকারীকে সনাক্ত করেন অন্য আরেকজন। আসলে ওই ছেলে (ধর্ষণে অভিযুক্ত) প্রথম থেকেই প্রতারণা করে এসেছে।তার বিরুদ্ধে বরং প্রতারণার মামলা করা উচিত। এখন বিচারক ডেকেছেন নির্ধারিত দিনে আমার জবাব দিব।

জানতে চাইলে চাইলে সনাক্তকারী হায়দার রহমান মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি অসুস্থ থাকায় তার স্ত্রী ও সহকারী আইনজীবী মর্জিনা বেগম বলেন, বিষযটি নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু এখানে আমাদের কোনো দোষ নেই।এফিডেভিট করতে আমাদের অন্য কোনো কাগজের প্রয়োজন হয় না। বিয়ের কাগজ থাকলেই হয়। সেটা দেখেই আমরা এফিডেভিট সনাক্ত করি।

এ ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১ এর পিপি নরেশ মুখার্জী বলেন, আদালতে বিচারকের কাছেও ধর্ষণের শিকার বয়ান দিয়েছে যে, সে ওই বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানে না। আসামির সঙ্গেও কোনোদিন সংসার করেন।

বিচারক তার বয়ানের ওপর ভিত্তি করে ৫০০/১৪ ধারায় নোটারী পাবলিক আইনজীবীকে শোকজ করেছেন। আগামি ৩ মে কারণদর্শানোর দিন নির্ধারন করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, নোটারী পাবলিক আইনজীবী নাজমুল হুদা ভুয়া এফিডেভিট প্রস্তুত করেছেন।সেই এফিডেভিট দেখিয়ে আদালতে প্রতারণা করে জামিন নিয়েছেন শিশু ধর্ষণের অভিযুক্ত ইউসুফ আলী। ভুয়া এফিডেভিটের দায় এই আইনজীবী এড়াতে পারেন না।আর অতীতেও তার বিরুদ্ধে ভুয়া এফিডেভিট প্রস্তুতের অভিযোগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য আদালতে তুলে ধরা হয়েছে। সেটি আমলে নিয়ে আদালত তাকে কারণদর্শাতে বলেছেন।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button