বগুড়া জেলা

হয়রানি-ভোগান্তির সমার্থক শব্দ বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়

বগুড়া শহরের নামাজগড়ের বাসিন্দা মোঃ বদরুদ্দোজা। বয়স ৮০ পেরিয়েছে। উন্নত কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক হলে এই বয়সে ঘরে বসে পেতেন সরকারের বয়স্ক ভাতা। যা দিয়ে চালাতে পারতেন নিজের ভরণপোষণের খরচ। তবে এদেশের বাস্তবতায় তা যেন দিবা স্বপ্ন। নিজের পাওনা ৪২ লাখ টাকাও বেহাত হয়েছে অচেনা ব্যক্তির কাছে।


সাসেক-২ প্রকল্পের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের গোকুল এলাকায় মোঃ বদরুদ্দোজার ৪ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। তবে ক্ষতিপূরণের ৪২ লাখ টাকা মানিক উদ্দীন নামের এক ব্যক্তিকে প্রদান করে জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখা। যার সঙ্গে এই বৃদ্ধের কোনো সম্পর্কও নেই বলে অভিযোগ করেন মোঃ বদরুদ্দোজা। বিরাট এই ভুল সংশোধনে এলএ শাখায় বছরের পর বছর চক্কর কেটে ক্ষয়ে গেছে পায়ের জুতো জোড়া। তবে কোনো সমাধান পাননি। অবশেষে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ভুক্তভোগী এই বৃদ্ধ।


শাজাহানপুর উপজেলার চোপিনগর এলাকার স্কুলশিক্ষক মোঃ সাইফুল ইসলামও এলএ শাখার হয়রানির আরেক শিকার। তিনি অবশ্য একা নন। সাজাপুর মৌজার ৯৪৩ দাগে এই স্কুল শিক্ষক ছাড়াও আমিনুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও বিপ্লব হাসানের মোট ১৩ শতক জমি একই প্রকল্পের আওতায় অধিগ্রহণ করে সরকার। ভূমি শাখায় ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলনের জন্য যোগাযোগ করলে ওই দাগের ভূমিমালিকদের বাটোয়ারা দলিল দিতে হবে জানিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ স্কুলশিক্ষক সাইফুল ইসলামের। টাকা দেয়া হয়নি আমিনুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেনকেও। তবে বাটোয়ারা দলিল ছাড়াই টাকা পান বিপ্লব হাসান। জানা গেছে প্রায় ২৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বিপ্লব। ভুক্তভোগী বাকি তিনজনের অভিযোগ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে নিজের টাকা পেয়েছেন নিয়ম না মেনেই।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়া শহরের মেরিনা রোডের এক ভাসমান ফল ব্যবসায়ী জানান, বগুড়া টু সারিয়াকান্দি সড়ক প্রশস্থের সময় তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৮ শতক জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। ২০১৯ সালে টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও ভূমি শাখায় ৫০ বারের বেশি যাতায়াত করে ৪ বছর পর ব্যাংকের চেক পেয়েছেন। তবে ক্ষতিপূরণের এই চেক পেতে ভূমি শাখার একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে ধাপে ধাপে অন্তত ৪ লাখ টাকা ‘খরচ’ দিতে হয়েছে বলে জানান তিনি।


জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুমের সেবা পেতেও ধীর গতির অভিযোগ আছে অনেক সেবাপ্রার্থীর। বিভিন্ন সরকারি কাজে প্রয়োজনীয় নথি তুলতে করা আবেদনের নিষ্পত্তি হতে সময় পেরিয়ে যায় মাসের পর মাস। স্মার্ট বাংলাদেশে অনলাইনে মাঠপরচার জন্য আবেদন করেন শিবগঞ্জ উপজেলার সুজাউল করিম। ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল তারিখে নির্দীষ্ট ফি জমা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করলে দীর্ঘ ১১ মাসেও মাঠপরচার কপি পাননি। এছাড়াও খারিজ বাতিলের সার্টিফাইড কপির জন্য কোর্ট ফি জমা দিয়ে আবেদনকারী মূলধারার এক গণমাধ্যমকর্মীও হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রতিনিয়ত এমন অসংখ্য সেবাপ্রত্যাশীদের কাছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হয়ে উঠেছে হয়রানির আরেক নাম।

এ ব্যাপারে বগুড়া লাইভে “হয়রানি-ভোগান্তির সমার্থক শব্দ বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়” শিরোনামে একটি পোস্ট প্রকাশ করা হলে তাতে মন্তব্য করেন বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, “বগুড়া জেলা প্রশাসনের যেকোনো সেবা পেতে বা নিতে কোনো ভোগান্তি তো দূরের কথা, ন্যূনতম সময়ক্ষেপন হলেও জেলা প্রশাসকের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত আছে।“ এছাড়াও হয়রানি বা ভোগান্তির যেকোনো অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে লিখিতভাবে জানানোর আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।

উল্লেখ্য, প্রতি বুধবার জেলার নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গণশুনানী পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। যেখানে সেবাগ্রহীতারা সরাসরি জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের অভিযোগ বা কাঙ্খিত সেবার কথা জানাতে পারেন।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button