বগুড়া জেলা

বগুড়ায় ১ বছরে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছে ১২ হাজার মানুষ

একটা সময় ছিলো যখন ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা পাসপোর্ট করার কথা মাথায় আসলেই দুঃশিন্তা হতো হয়রানি আর ভোগান্তির। আর সাথে দপ্তরের বাইরে থাকা দালালদের দৌরাত্ম তো আছেই। তবে সময় বদলাচ্ছে, ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লেগেছে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়াতেও যার ইতিবাচক সুফল মিলছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বগুড়াতে।


অনলাইনে আবেদন করে শুধুমাত্র নির্ধারিত দিন উপস্থিত হয়ে পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হলে ঘরে বসেই মিলছে ড্রাইভিং লাইসেন্স যাতে একদিকে যেমন কমেছে সাধারণ মানুষের হয়রানি অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে না কর্মজীবি মানুষের সময়। আর আবেদন থেকে শুরু করে টাকা জমাদান পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে হওয়ায় দালাল কিংবা অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা প্রতারিত হওয়ার ঘটনাও বন্ধ হচ্ছে এই ডিজিটাল সিস্টেমে। বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম এর নির্দেশনা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে মেজবাউল করিমের যোগদানের পর বগুড়া বিআরটিএ তে ইতিবাচক এই পরিবর্তনের চেষ্টা আরো বেগবান হয়েছে।


বিআরটিএ বগুড়া সার্কেল অফিসের তথ্যমতে, গত ১ বছরে অনলাইন প্রক্রিয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন প্রায় ১১ হাজার ৭৬০জন পরীক্ষার্থী যাদের মাঝে পেশাদার চালক ছিলেন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। অনলাইন এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআরটিএ বগুড়া সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম জানান, বর্তমান সরকার স্বচ্ছ ও ভোগান্তিহীন সেবা নিশ্চিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়া পুরোটাই ডিজিটালাইজেশন করেছে যার সুফল পাচ্ছে তৃণমূলের সাধারণ মানুষ। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্যে প্রথমে অনলাইনে লার্নার কার্ডের জন্যে আবেদন করতে হবে যেখানে লাইট ও মোটরসাইকেলের আবেদনের জন্যে ৭৫৯ টাকা এবং শুধু মোটরসাইকেলের জন্যে ৫১৮ টাকা সরকারি ফিস জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে লার্নার কার্ডে থাকা পরীক্ষার দিন উপস্থিত হয়ে সকালে লিখিত পরীক্ষা, পরে মৌখিক পরীক্ষা এবং উর্ত্তীণ হলে ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয় একজন আবেদনকারীকে। যে পরীক্ষা নেয়া হয় একটি বোর্ডের মাধ্যমে যেখানে উপস্থিত থাকে বোর্ডের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা তার মনোনিত যে কোন একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন অথবা তার মনোনিত স্বাস্থ্যবিভাগের প্রতিনিধি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) অথবা তার মনোনিত ইন্সপেক্টর এবং বোর্ডের সদস্য সচিব হিসেবে বিআরটিএ বগুড়ার মোটরযান পরিদর্শক যার দায়িত্ব শুধু বোর্ড সমন্বয় করা বাকি সব প্রক্রিয়ায় চলে অনলাইনে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বার্তা দেয়া হয় আবেদনকারীকে তারপর ঘরে বসেই অনলাইনে প্রার্থী জমা দিতে পারবেন মূল আবেদন। মোবাইল ব্যাংকিং এর বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে পেশাদার আবেদনকারীরা ২ হাজার ৭৭২ টাকা এবং অপেশাদার চালকদের ৪ হাজার ৪৯৭ টাকা জমা দিতে হবে। যদিও এর সাথে অনলাইনের কিছু চার্জ যুক্ত হয়। এরপরে ডাকযোগে ঘরে বসেই একজন আবেদনকারী পেয়ে যাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স। লার্নার আর মূল আবেদনের সরকার নির্ধারিত ফিস ছাড়া আর কোন টাকাই লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্যে প্রয়োজন হয়না।


এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ বগুড়া সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি) এটিএম ময়নুল হাসান বলেন, উত্তরবঙ্গের মাঝে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা বগুড়া। অনলাইন প্রক্রিয়ায় এ জেলায় বর্তমানে মাসে ৭ থেকে ৮টি বোর্ডের মাধ্যমে হাজারের সংখ্যায় মানুষ ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করে থাকে যাদের ভোগান্তিহীন সেবা দিতে কোন আন্তরিকতার অভাব নেই তাদের। আবেদনের পর যাদের মাত্র পরীক্ষার একদিনের জন্যে বিআরটিতে আসতে হয়। এছাড়াও পেশাদার চালকদের লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রেও এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। খেঁটে খাওয়া মানুষদের যেন সময় অপচয় না হয় সেই লক্ষ্যে তাদের একদিনের মাঝেই রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ পরবর্তী ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষে তাদের ডাকযোগে লাইসেন্স প্রেরণ করা হয়। তিনি সকল লাইসেন্স আবেদনকারীদের দালাল কিংবা প্রতারক চক্র থেকে সর্বদা সচেতন থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পুরো প্রক্রিয়া যখন অনলাইনে তখন প্রতারকদের রুখে দিয়ে স্বচ্ছতার সাথে নিজের আবেদন নিজেদেরকেই করতে বলেন এই কর্মকর্তা। বিআরটিএ কোন কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা আছে এমন কথা বলে কেউ যদি আবেদনকারীদের থেকে টাকা নেয় বা পরীক্ষায় পাশের কথা বলে আর্থিক প্রতারণা করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে বলেন তিনি। এছাড়াও বিআরটিএ’র আশেপাশে ঘোরাফেরা করা এমন প্রতারকদের দেখলে পুলিশে দেয়ার কথাও বলেন এই কর্মকর্তা। তিনি বগুড়া বিআরটিতে আগামীতেও এই ভোগান্তিহীন ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।


এ প্রসঙ্গে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মেজবাউল করিম বলেন, বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে জনবান্ধব সেবা নিশ্চিতে তারা বদ্ধপরিকর। একটা সময় বিআরটিএ এ তে সেবা পেতে গেলে নানা ভোগান্তির খবর পাওয়া গেলেও এখন তার আমূল পরিবর্তন এসেছে। পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় কমেছে হয়রানি ও ভোগান্তি। এছাড়াও নিশ্চিত হয়েছে স্বচ্ছতার। বগুড়ায় তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন ভোগান্তিহীন পন্থায় ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের যে কার্যক্রমে আঙ্গুল তোলার কোন সুযোগ নেই কারণ এই বোর্ডে রয়েছে কয়েকটি দপ্তরের প্রতিনিধি। তিনি বলেন, লাইসেন্স প্রাপ্তিতে কারও প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই বগুড়ায় কেউ চেষ্টা করলে বা কারও নাম ভাঙ্গালে তা শক্ত হাতে দমন করা হবে। দীর্ঘদিনের একটি নেতিবাচক মানসিকতা একদিনে পরিবর্তন না করা গেলেও তারা বগুড়া বিআরটিতে ইতিবাচক এই ধারা অব্যাহত রাখতে চান। এছাড়াও হয়রানি কিংবা ভোগান্তির ঘটনায় তার দপ্তরের দরজা সাধারণ মানুষের জন্যে সর্বদা খোলা আছে মর্মে সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button