কেন সারা পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় এপ্রিলফুল? এটা আসলে কি?
এপ্রিলের প্রথম দিনটিকে বোকা বানানোর দিন হিসাবে ধরা হয়। দিনটিতে সারা পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় ‘এপ্রিলফুল’। অনেক বছর ধরেই এটি পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু কীভাবে এটি শুরু হয়েছিল, সেটি অনেকেরই অজানা।
এর ইতিহাসে অনেক কাহিনি আছে। এক এক দেশে এক এক রকম সংস্কৃতির সঙ্গে যোগ রয়েছে এই কাহিনির। দেখে নেওয়া যাক, সেগুলি কী কী।
ক্যালেন্ডার বদল: এটিই সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি। ১৫৬৪ সালে ফ্রান্স দেশের ক্যালেন্ডার বদল করে। এর আগে বছর শুরু হত মার্চের শেষ থেকে। কিন্তু ওই বছর সেটি বদল করে নতুন বছর শুরু করা হয় ১ জানুয়ারি থেকে। এই পরিবর্তন অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা ২৫ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন বছরের সূচনা পালন করতে থাকেন। যাঁরা পরিবর্তনটি মেনে নেন, তাঁদের বোকাও বানাতে থাকেন। তাঁদের পিঠে কাগজের তৈরি মাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়। নতুন ক্যালেন্ডারের পক্ষ যাঁরা, তাঁদের ডাকা হত এপ্রিল ফিশ বলে। সেই থেকেই এপ্রিল ফুলের গল্প শুরু হয়। ‘এপ্রিল ফুল’-এর ইতিহাস নিয়েই এটিই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রচলিত গল্প।
রোমান তত্ত্ব:রোমান দেবতা প্লুটো যখন তার স্ত্রী পারসিফনকে অপহরণ করে আনেন, তখন পারসিফনের মা সেরিস মেয়েকে খোঁজার অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু পান না। মেয়ে তখন মাটির নীচে। কিন্তু তাঁর মা ‘বোকার মতো’ মাটির উপরে খুঁজতে থাকেন। সেই ‘বোকামি’র কথা ভেবেই নাকি রোমানরা এই দিনটিতে বোকামি দিবস পালন করত।
ব্রিটিশ কাহিনি:ব্রিটিশ লোককথা বলে, নটিংহ্যামশায়ারের ‘গথাম’ শহর নাকি ছিল বোকাদের শহর। ত্রয়োদশ শতকের নিয়ম ছিল, সে দেশের রাজা যেখানে যেখানে পা রাখবেন, তা হয়ে যাবে রাষ্ট্রের সম্পত্তি। যখন গথামবাসীরা শুনলেন, রাজা আসছেন, তাঁরা নাকি বললেন, ঢুকতে দেবেন না। রাজা সৈন্য পাঠালেন। সৈন্য এসে দেখল সারা শহরে ভয়াবহ কাণ্ড! সবাই বোকার মতো কাজ করছে। তারা ফিরে গিয়ে রিপোর্ট দিল। রাজা বললেন, এমন বোকাদের শাস্তি দেয়া যায় না। তাই তিনি মাফ করে দিলেন। গথাম স্বাধীন থাকল। সেই থেকে দিনটি ‘বোকা দিবস’।
অনেকে আবার এই দিনটির সূচনা খুঁজে পায় প্রাচীন রোমের একটি উৎসবে। উৎসবের নাম ছিল হিলারিয়া (ল্যাটিন ভাষায় আনন্দ)। মানুষ ছদ্মবেশে নানান আজব পোশাক পরে সহ নাগরিকদের নিয়ে ঠাট্টা করে এই দিনটিকে পালন করত।
মিশরের পৌরাণিক কাহিনির সঙ্গেও এপ্রিল ফুল দিবসের একটি সম্পর্ক রয়েছে। তবে দিনটির উৎপত্তি যাই হোক না কেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের হাসিয়ে চলেছে এই দিনটি। বসন্ত বিষুবের খুব কাছাকাছিই পড়ে এই দিনটি। উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকে স্বাগত জানানোর সময়টিকেও উদযাপন করা হয় আনন্দের মেজাজে।
এই দিনে রসিকতা এবং কৌতুক পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছেন। টেলিভিশন শো এবং বিভিন্ন স্ট্যান্ড আপ কমেডি শো এই দিনটিকে আরও জমজমাট করে তোলে।