জাতীয়দিবসপ্রধান খবর

শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর প্রায় ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের আজকের দিনে তিনি দেশে ফেরেন। সেদিন বিকাল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে শেখ হাসিনা ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে কুর্মিটোলার পুরোনো বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। দিনটি ছিল রবিবার। কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়া ও প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেদিন লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারকে বরণ করে নিতে। বৈরী আবহাওয়া ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশের গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর-বন্দর থেকে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিল কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে। জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল রাজধানী ঢাকা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ঢাকার আকাশ ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়েছিল। শেখ হাসিনার সেদিন ফিরে আসার দিনটিকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ। তবে দলটির নেতারা শেখ হাসিনার সেদিনের ফিরে আসাকে ‘গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন’ হিসেবে অবহিত করেছেন। দিনটি উপলক্ষে বরাবরের মতোই নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে অনন্য মাইলফলক। তার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বিপথগামী একদল সেনা কর্মকর্তার নির্মম বুলেটের আঘাতে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে ঘাতক গোষ্ঠী। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক তেমনি এক ক্রান্তিলগ্নে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সেই থেকে দলীয় সভাপতির গুরুদায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে দল ও দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন তিনি। ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনো কিছুই তাকে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর দীর্ঘ ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনার দীর্ঘ ৪৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের এই পথচলা কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। টানা চতুর্থবারসহ পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, মেধা-মনন, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে একসময় দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করত সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সততা, মেধা, দক্ষতা ও গুণাবলিতে সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, গত ৪৩ বছরের সবচেয়ে সাহসী নেতা ও সৎ রাজনীতিকের নাম বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। গত ১৫ বছরে উন্নয়ন অর্জন ও আধুনিকতায় বাংলাদেশ বদলে গেছে। ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশের কোনো মিল নেই।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আসলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন। স্বাধীনতার আদর্শের প্রত্যাবর্তন। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের প্রত্যাবর্তন। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি জয় বাংলার প্রবর্তন। তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই গণতন্ত্র শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছে। 

কর্মসূচি

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচির মধ্যে সকাল ৯টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বেলা সাড়ে ৩টায় তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য দেবেন। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এ ছাড়া সারা দেশে রয়েছে দোয়া মাহফিল ও বিশেষ প্রার্থনা সভা। দেশব্যাপী বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button