ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর খবরে বাড়লো তেলের দাম
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু ও সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের অসুস্থতার খবরে প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশ দুটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সালমানের অসুস্থতার কারণে তার জাপান সফর বাতিলের খবরও জানিয়েছেন দেশটির যুবরাজ। এর মধ্যেই সোমবার বিশ্ববাজারে বেড়েছে তেলের দাম।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৪১ সেন্ট বা ০.৫ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮৪.৩৯ ডলার। ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড অয়েলের দাম ২৩ সেন্ট বা ০.৪ শতাংশ বেড়ে ৮০.২৯ ডলারে পৌঁছেছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তিনি রোববার আজারবাইজান সীমান্তের কাছে পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তার সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সফর ছিলেন।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সোমবার তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
অন্যদিকে, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তার বাবা বাদশাহ সালমানের অসুস্থতার কারণে রাষ্ট্রীয় জাপান সফর স্থগিত করেছেন। সোমবার থেকে সফরটি শুরু হওয়ার কথা ছিল বলে জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি জানিয়েছেন।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রোববার জানিয়েছে, ৮৮ বছর বয়সী বাদশাহ সালমানের ফুসফুসের চিকিৎসা করানো হবে।
আইজি মার্কেটস বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, ‘বাদশাহর স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবর তেলের বাজারে অনিশ্চয়তা যোগ করেছে। তেলের মূল্য আরও বাড়তে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এমন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গত সপ্তাহে চীনের ঘোষণাও এখানে একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে।
আইএনজি গ্রুপের পণ্য কৌশলের প্রধান ওয়ারেন প্যাটারসন বলেন, ‘তেলের বাজার মূলত সীমাবদ্ধ থাকে। এই সীমা থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের সম্ভত ওপেক+ নীতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
এ পরিস্থিতিতে বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ অবস্থায় তেলের বাজারে এমনিতেই যে অনিশ্চয়তা আছে, তা আরও ঘনীভূত হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ২০০ দিনের গড় দাম ৮০ দশমিক শূন্য ২ ডলার অতিক্রম করেছে; এখন তা ৮৩ দশমিক ৫০ ডলারে উঠে যেতে পারে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইজি মার্কেটসের বিশ্লেষক টনি সিকামোর রয়টার্সকে বলেন, ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বেড়ে যাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। শুধু ইরানি প্রেসিডেন্টের দুর্ঘটনা ও সৌদি বাদশাহর স্বাস্থ্যগত কারণে নয়, চীন আবাসন খাতকে টেনে তুলতে গত সপ্তাহে যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, তার প্রভাবে তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। চীন বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক। এই দেশের চাহিদার ওপর বিশ্ববাজারে তেলের দাম অনেকাংশে নির্ভর করে।
গত সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১ শতাংশ বাড়ে। গত তিন সপ্তাহের মধ্যে এই প্রথম সাপ্তাহিক হিসাবে ব্রেন্টের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাজারের ইতিবাচক খবরের জেরে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম গত সপ্তাহে দুই শতাংশ বেড়েছে। আজ নতুন সপ্তাহের শুরুর দিন সেই ধারা আরও বেগবান হয়েছে।