প্রধান খবরবগুড়া জেলা

নদী সাঁতরে পালাতে চেয়েছিলেন ফাঁসির ৪ আসামী

ফাঁসির আসামিরা জেলাখানা থেকে পালিয়েছেন, এই খবর শুনে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম রাতেই মাঠে নামে। এই টিমের এক দলের নেতৃত্বে ছিলেন বগুড়ার সদর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই খোরশেদ আলম। তিনিই ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করেন। এই কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায় অভিযানের আদ্যপান্ত।

এসআই খোরশেদ জানান, করতোয়া নদীর পাড়েই জেলা করাগার। কনডেম সেল যে জায়গায় সেটিও নদীর পাশেই। ঠিক সেই কর্নারেই করতোয়া নদী ও নাটাইপাড়ার মধ্যে একটু পায়ে চলা সংযোগ সেতু রয়েছে। আর উত্তর দিকে জেলা প্রশাসন ভবন। দক্ষিণে সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়। পূর্বদিকে করতোয়া নদী। পশ্চিমে বগুড়া পৌরসভাসহ শহরের জনবহুল এলাকা। ভৌগোলিক এসব দিক বিবেচনা করে খোরশেদ ধারনা করেন আসামী করতোয়া নদী পার হয়ে পূর্ব দিকে যেতে পারেন। বিষয়টি মাথায় নিয়েই তিনি করতোয়া নদীর পূর্ব দিকে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, করতোয়া নদীর পূর্ব পাড়ের রাস্তা ধরে হেঁটে এক সময় চাষীবাজার এলাকায় পৌঁছান। এই সময় নদীর পানির শব্দ পান। তখন নিচের দিকে তাকিয়ে দেখেন কয়েকজন মানুষ করতোয়া নদীর পানি থেকে তীরে উঠছেন। পরে তাদের ডাক দিলে তীরে এসে বসে পড়েন। এ সময় তারা খুব ক্লান্ত থাকায় দৌড়াতে পারছিলেন না, কারণ জেলখানা থেকে নদী সাঁতার দিয়ে তারা প্রায় আধা কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন। এরপর তাদের দেখে সন্দেহ হলে তাদের আটক করেন খোরশেদ। এ সময় ফরিদ শেখ নামে এক আসামির হাতে ছিল নিজের হিস্ট্রি টিকেট (আসামির পরিচয়পত্র)।

এটা দেখেই এসআই খোরশেদ নিশ্চিত হয়ে যান। পরে জেলা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ও কারা কর্তৃপক্ষ চার আসামীকে সনাক্ত করেন।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২৫ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে কারাগারে কনডেম সেল থেকে আসামিরা পালিয়ে যান। আসামীরা পালানোর এক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন– কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী থানার দিয়াডাঙ্গা গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম ওরফে মজনু (৬০), নরসিংদী জেলার মাধবদী থানার ফজরকান্দি গ্রামের মৃত ইসরাফিলের ছেলে আমির হামজা ওরফে আমির হোসেন (৪১), বগুড়া কাহালু উপজেলার উলট্ট গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে জাকারিয়া (৩৪) এবং বগুড়া সদরের কুটিরবাড়ি গ্রামের ইসরাইল শেখের ছেলে ফরিদ শেখ (৩০)। তারা প্রত্যেকেই হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি।

আসামী পালিয়ে যাওয়ার এই ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

যেভাবে পালালেন চার আসামি

চার আসামির পালানোর বিষয়ে কথা বলেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, বগুড়া কারাগার অনেক পুরাতন। এটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে ভবনের অনেক স্থান নাজুক। ওই চার আসামিকে এ বছরের ১ জুন এখানে নিয়ে আসা হয়। তাদের রাখাও ছিল একই সেলে। তারা আসার পর আমি পরিদর্শনেও গিয়েছিলাম। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে তারা ছাদ ফুটো করে পালিয়ে যান।

ওরা ছাদের যে অংশে ফুটো করেছে সেখানে ছাদে কোনো রড ছিল না। তারা ছাদে গামছা পেচিয়ে ফুটো করে। আমরা এসব স্থান সংস্কারের কথা বলেছি। এ ছাড়া যেদিন দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে আসামিরা সেখানে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।

ডিসি আরও বলেন, এসব সামগ্রিক বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিএম ইমরুল কায়েসকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগুড়ায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা যে স্থানে ছাদ ফুটো করেছেন সেখানে কাপড় দিয়ে বসার ঝুলন্ত জায়গা তৈরি করেন। এরপর সেখানে বসেই মানুষ বের হওয়ার সমপরিমাণ ছিদ্র করেন। সেই স্থান দিয়ে কৌশলে তারা ছাদের উপরে ওঠেন। তারপর কারাগারের পূর্ব দিকে কাপড় দিয়ে রশি তৈরি করে প্রাচীর বেয়ে নিচে নামেন। ছাদ ফুটো করার জন্য ব্যবহৃত স্ক্রডাইভার, চামচের অংশ উদ্ধার করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

এ ঘটনায় অতিরিক্ত কারা মহাপুলিশ পরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি জানার পর আমি ঢাকা থেকে এসেছি। কারা পরিদর্শন করেছি। এটি ১৮৩৩ সালে নির্মিত কারাগার। এই সেলগুলোতে ১৪০ বছর ধরে বন্দিরা থাকে।

আসামীরা রাত ২টা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে এ ঘটনা ঘটায়। তাদের বিছানার চাদর ব্যবহার করে জেলখানার প্রাচীর টপকাতে সক্ষম হয়। প্রাথমিকভাবে কারাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button