নন্দীগ্রাম উপজেলা

পুলিশ কর্মকর্তার কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না আদালতের রায়?


নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার নন্দীগ্রামে আদালতের নির্দেশের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও রাস্তার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন।


অভিযোগ উঠেছে, অবৈধ দখলকারী ব্যক্তির ভাড়াটিয়া এক পুলিশ কর্মকর্তার ক্ষমতার জোরে রাস্তা উদ্ধার কাজ সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি রাস্তায় চলাচলকারী বাসিন্দাদের মামলা-হয়রানির হুমকি দেয়া হয়েছে।


ঘটনাটি বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পশু হাসপাতাল পাড়া এলাকার।

এতে করে রাস্তায় চলাচলকারী স্থানীয় বাসিন্দাসহ অন্তত হাজার ব্যক্তিকে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।


এ ঘটনায় বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে মামলার বাদী স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা মতিন বগুড়ার মফিজ পাগলার মোড়ে রোচাস রেস্টুরেন্টে সাংবাদিক সম্মেলন করেন।


মতিন অভিযোগ করেন, দুবছর আগেও ছিল সাত ফুট প্রশস্ত গলি। এই রাস্তায় রয়েছে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস। পৌরসভা থেকে ঢালাই দেয়া রাস্তায় নিয়মিত চলাচল করেন অসংখ্য মানুষ। তবে হঠাৎ করে রাস্তার সিংহভাগ প্রাচীর দিয়ে ঘিরে নেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। মামলায় বিষয়টি সুরাহার পর রাস্তা উদ্ধারে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু আদালতের নির্দেশের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও রাস্তার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন।


ভুক্তভোগীদের কাছে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে ওই রাস্তা চলাচলের ব্যবহার হয়ে আসছে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে নন্দীগ্রাম পৌরসভা রাস্তাটি ইট দ্বারা সোলিং করে দেয়া হয়।


গোলাম মোস্তফা মতিন বলেন, ২০১৮ সালে ৫ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে দোতলা ভবন নির্মাণ করি। এই ভবনে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস ভাড়া হিসেবে রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশি আজিজুর রহমানের বাড়ির পূর্ব পাশে সাত ফুট চওড়া রাস্তা ছিল। এই রাস্তা দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাসহ সাব রেজেস্ট্রি অফিসের সেবাগ্রহী দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ চলাচল করেন। ২০২২ সালে আজিজুর রহমান এই রাস্তার পাঁচ ফিট দখলে নিয়ে প্রাচীর তুলে বিল্ডিং বাড়ির সাথে যুক্ত করে নেন।


পরবর্তীতে ২০১৯ জনসাধারণের পক্ষে আমি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বগুড়ায় মামলা করি। মামলার তদন্ত পান নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাস্তাটি পৌরসভার ইট দ্বারা সোলিং করা রাস্তাটি চালু হওয়া যুক্তিযুক্ত বলে তদন্ত প্রতিবেদন বাস্তবায়ন যোগ্য বলে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি।


মামলাটির দুইটি প্রতিবেদন ও উভয় পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল ইটের প্রাচীর অপসারণ করার জন্য নির্দেশ দেন আদালত। নির্দেশ অনুযায়ী ৭ মে একটি উচ্ছেদ নোটিশ জারি করেন তৎকালীন সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুমায়ুন কবির।


গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, কিন্তু উচ্ছেদ করতে গেলে বাড়িওয়ালা আজিজুর রহমান বাধা দেন। ওই সময় ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া নন্দীগ্রাম-কাহালু সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ওমর আলী নিজেদের অফিসের জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য সময় দাবি করেন।


বর্তমানে জনসাধারণের রাস্তার স্বার্থে আমিসহ আমার পরিবারের সকলে হুমকির মধ্যে আছি। এমনকি এখন পর্যন্ত আমার ওপর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ৩টি মামলা করা হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত মতিনের প্রতিবেশী ইনসান আলী জানান, আমরা জানি না কেন আদালতের রায় হওয়ার দেড় মাস পেরিয়ে গেল। তারপরেও এই আদেশ কার্যকর হচ্ছে না। আমাদের দাবি আদালতের যে রায় দেয়া হয়েছে তা অতি দ্রুত কার্যকর করা।


তবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিবাদী আজিজুর রহমান রাস্তা দখলের পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বাদী পক্ষের দাবিকেও ভিত্তিহীন বলেন।
আজিজুর রহমান বলেন, ১৯৯০ সালে পাঁচ শতকের ওপর বাড়ি নির্মাণ করেন। নির্মাণের সময় তিন ফিট ছেড়ে ভবন তুলেন। সেই অবস্থায় আছে। বিবাদমান জায়গায় তার বাড়ির সেপটিক ট্যাংকি আছে। তার ছেড়ে দেয়া জায়গা দিয়ে মানুষজন চলাচল করে থাকে। কিন্তু সেটি কখনই রাস্তা ছিল না।
তিনি আরও বলেন, আমি তিন ফিট জায়গা ছেড়ে বাড়ি করেছি। যারা নালিশ করেছেন তারাই জায়গা ছাড়েনি। নিজেরা না ছেড়ে অন্যের কাছে জায়গা দাবি করলেই হবে? ভাগ্য ভালো আমার বাসায় পুলিশের সার্কেল অফিস। সহকারী পুলিশ সুপার কথা বলার পর উচ্ছেদ করতে পারেনি।
এ বিষয়ে সরকারি অফিসের মালামাল সরানোর জন্য সময় চেয়েছিলেন বলে জানান সহকারী পুলিশ সুপার ওমর আলী। তবে এর বেশি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।


আদালতের রায়ে উচ্ছেদ করতে গিয়ে ফিরে আসার বিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুমায়ুন কবির বলেন, প্রাচীর উচ্ছেদের সময় যখন গিয়েছিলাম তখন আমাদের কাছে মালামাল সরানোর জন্য সময় চেয়েছিল। এ জন্য তাদের এক মাস সময় দেয়া হয়েছে। এখন সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নোটিশ করার জন্য বলা হয়েছে । বিধিমোতাবেক ওই রাস্তাটি দখলমুক্ত করা হবে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button