বগুড়ায় মাঠে নেমেছে ট্রাফিক পুলিশ, চালু হয়েছে থানাও
বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার পতনের পর বগুড়ায় আজ ছোট পরিসরে হলেও মাঠে নেমেছে ট্রাফিক পুলিশ। শুরু হয়েছে থানা পুলিশের কার্যক্রমও। তবে থানার ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ পর্যায়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের দাবি, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হওয়া জরুরি।
গত ৫ আগস্ট বগুড়ায় বিভিন্ন স্থাপনায় তাণ্ডব শুরু হয়। সেদিনই সদর থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগে জ্বালিয়ে লুটপাট করা হয়েছে সব কিছু। এই এলাকার মধ্যেই সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়। এটিও আগুনে ভষ্মীভূত হয়েছে। লুটপাটও হয় ব্যাপক। এরপর থেকে বগুড়া শহরের সব পুলিশ ক্লোজ করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছিল। সদর থানা কিংবা ট্রাফিক পুলিশের সব সদস্যকেই নেওয়া হয়েছিল ব্যারাকে। পরের দিন সকালে থানার পোড়া ভবন থেকে উৎসুক জনতারা ভিডিও করেন।
জরুরি প্রয়োজনে জেলা সদরের কোনো পুলিশের কাছে সেবা পাওয়া সুযোগ ছিল না। এমনকি পুলিশ সুপার কার্যালয়ও ছিল বন্ধ। গত শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে সব। তবে সাধারণ মানুষ আগের মতো এখনো সেবা পাচ্ছে না।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কয়েকদিন লাগবে। ইতোমধ্যে আমাদের কাজ শুরুও হয়েছে।
গণঅভ্যত্থানের আটদিন পরে আজ সোমবার প্রথম মাঠে নেমেছে বগুড়ার ট্রাফিক পুলিশ। এতোদিন এই পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছিল শিক্ষার্থী-সাধারণ মানুষ।
দুপুরে সাতমাথায় কথা হয় রতন কুমান নামের এক ট্রাফিক সদস্যের সাথে। তিনি জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর জেলায় পুলিশিং কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল না। এতোদিন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ এই কাজ করেছেন। এটা আমাদের ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করছে। এখনো তারা রাস্তায় কাজ করছে। আমরা মাঠে নামার পর মানুষের ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। পরিস্থিতি অচিরেই স্বাভাবিক হবে।
জেলা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বগুড়ায় প্রথম দিনে (আজ) শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট ৩০ জন ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে তারা দায়িত্ব পালন করছেন।
শহরের সাতমাথায় দায়িত্ব পালন করা আরেক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বাবলা বলেন, আমরা মাঠে আসার কারণে সাধারণ মানুষ খুশি। তারাও আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। আমরা সেবামূলক পুলিশিং করতে চাই। এই কাজের জন্য সার্বিকভাবে সবার সহযোগিতা চাই।
দুপুরে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় ঘুরে দেখা যায় পুলিশের সাথে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন। শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীরা ৬ আগস্ট থেকে রাস্তায় যানযট নিরসনের দায়িত্ব নেন।
সরকারি শাহ সুলতান কলেজের বিএনসিসি ইউনিটের ক্যাডেট রাকমানু ইসলাম শীষ বলেন, সেনাবাহিনীর নির্দেশে আমরা মাঠে আছি। আমাদের ইউনিটের ১০ জন ক্যাডেট কাজে নিয়োজিত আছি। আমরা দুই শিফটে কাজ করছি। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিএনসিসি, স্কাউট-রোভার সদস্যরা মাঠে আছে।
নিরাপদ সবুজ বাংলা নামে একটি বেসরকারি সংগঠনের সদস্য তাহমিনা আক্তার তার দল নিয়ে সড়কে কাজ করছেন। তিনি জানান, যানযট নিরসন করতে গিয়ে কিছু ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতাও হয়েছে। অনেক স্থানে যানবাহন ব্যবহারকারীদের সাথে অনেক স্বেচ্ছাসেবীরা খারাপ আচরণ করেছে। এটা অতিউৎসাহীদের কারণে হয়েছে। আবার আজকে পুলিশ সকালে আসার পর অনেক মানুষ তাদের সাথে বাজে আচরণ করার চেষ্টা করেছে। এখন অবশ্য অনেকটাই স্বাভাবিক। আমাদের ভালো লাগছে আগে পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা দিত। এখন আমরা পুলিশকে নিরাপত্তা দিচ্ছি।
পুলিশ বিহীন শহরে ৬ আগস্ট থেকে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে আসছেন বুয়েটের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান আকিব। তিনি জানান, আজকে ট্রাফিক পুলিশ আসার পর আমাদের জন্য একটু স্বস্তির হয়েছে। প্রথম তিন দিন আমরা খুব ভালো কাজ করেছি। পরে অতিউৎসাহী অনেকে রাস্তায় আসেন। সবাই কাজ করতে চায়, কাকে ছেড়ে কাকে নিষেধ করব। তখন যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ কাজে কিছুটা সমস্যা পোহাতে হয়েছে।
বগুড়ায় গতকাল রোববার থেকে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে সদর থানার কার্যক্রম চলছে। এখানে আভ্যন্তরীণ কাজ চলছে।
বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক আব্দুর রহিম বলেন, অগ্নিসংযোগের কারণে সদর থানার সবকিছু ভস্মীভূত হয়েছে। সদর থানা থেকে ৩৮ টি অস্ত্র লুট হয়েছে। উদ্ধারে চেষ্টা করা হচ্ছে। গাড়িগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বিকল্পভাবে সাধারণ মানুষকেও ছোট পরিসরে সেবা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। আমরা জনবান্ধব পুলিশিং করতে চাই।
বগুড়ার সুশাসনের জন্য নাগরিক কমিটির সদস্য তাহমিনা পারভীন শ্যামলী বলেন, পুলিশ আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা মাঠে নেই। এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য খুব শঙ্কার। রাস্তাঘাটে চলাচল করার জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি ছিল। থানায় পুলিশ কাজ করছে, ট্রাফিকরা রাস্তায় নেমে যানবাহন চলাচলে সহযোগিতা করছে; এটি খুবই আশাব্যঞ্জক। আমরা নিরাপদ নগরী চাই।
গত কয়েকদিন পরে বগুড়ার শহরের ইয়ামাহ মোটরসাইকেলের ডিলার আব্দুল মোত্তালেব মানিক তার প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের সভাপতি সরকারপ্রধান থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর শহরে ভাঙচুর ও তাণ্ডব শুরু হয়েছিল। এই কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। পুলিশিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা শঙ্কামুক্তভাবে ব্যবসা করতে চাই।
জেলার ১২ থানায় পরিপূর্ণভাবে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বগুড়া পুলিশ সুপার জাকির হাসান। তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে পুলিশের কিছু গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি পুলিশের সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হচ্ছে।