রংপুরে একদিনে ৩ হত্যা মামলা: এক মামলায় আসামি শেখ হাসিনা
নিজস্ব প্রতিবেদক: রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে।এর মধ্যে একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া মামলার আসামি রয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।
রোববার (১৮ আগস্ট) রংপুর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসব মামলা হয়। শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেন আদালত।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ, আব্দুল্লাহ আল তাহির ও ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলামের স্বজনেরা এসব মামলা করেন।
মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পৃথক তিন মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদসহ ৭৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩৩৫ জনকে।
রোববার রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি),রংপুরের সাবেক পুলিশ কমিশনার ও সাবেক ডিআইজিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মামলার আবেদনে আসামি করা হয়েছে তৎকালীন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুর ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান, সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরান হোসেন, থানার ওসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের এএসআই সৈয়দ আমীর আলী, সুজন চন্দ্র রায়।
এ ছাড়া আসামি করা হয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামিম মাহফুজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মণ্ডল, গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ, বেরোবি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেনকে। এ ছাড়া অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ভাই হত্যায় দৃষ্টান্তমূলক দাবি চেয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথাও বলেছেন সাঈদ হত্যা মামলার বাদী তার বড় ভাই রমজান।
একই দিনে শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির (২৮) হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নিহতের বাবা মো. আব্দুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি (বাধ্যতামূলক অবসর) আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (বাধ্যতামূলক অবসর) মো. মনিরুজ্জামান,মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলামসহ বিভিন্নজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৩০০ জনকে।
এই মামলার প্যানেল আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন রংপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী তারেকুজ্জামান। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সাধারণ ছাত্রজনতার উপর গুলি চালিয়ে তাহিরকে হত্যা করা হয়েছে। এ কারণে তিনি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলার আবেদন করেন। এটি আমলে নিয়ে আদালত রংপুরের কোতোয়ালি থানাকে এটি এজাহার হিসেবে নিতে বলেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজার এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আব্দুল্লাহ আল তাহির। সে ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ গ্লাস এন্ড সিরামিকস এর অষ্টম পর্বের শিক্ষার্থী ছিল।
একই দিনে ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম মেরাজের মৃত্যুর ঘটনায় মা আম্বিয়া খাতুন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত কোতয়ালীতে দায়ের করা এ মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আরো অনেকে।
গত ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মেরাজ নিহত হন।
এই মামলায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার উৎপল কুমার রায়, সহকারী কমিশনার ইমরান হোসেনসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।