দুপচাঁচিয়া উপজেলাপ্রধান খবর

বগুড়ায় যুবদলের কর্মী হত্যা মামলার আসামি স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিলে!


নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যুবদল কর্মী হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি রবিউল ইসলামের উপস্থিতি দেখা গেছে।

রবিউল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় উপজেলায় আবু রায়হান রাহিম নামে এক যুবদল কর্মীকে হত্যা মামলার ১০ নম্বর আসামি।


সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপচাঁচিয়া উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রবিউল ইসলাম অংশ নেন। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।


এর আগে গত ১৭ আগস্ট দুপচাঁচিয়া থানায় উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২২ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আবু রায়হান রাহিমকে হত্যার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন রাহিমের মা রওশন আরা বেগম।


আবু রায়হান রাহিম উপজেলা যুবদলের সদস্য ও একটি টিসু কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন। আর এই মামলার ১০ নম্বর আসামি করা হয় রবিউল ইসলামকে। রবিউল উপজেলার পাইকপাড়ার বাসিন্দা। বিগত সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মিছিলের আয়োজন করে উপজেলার নেতা-কর্মীরা। মিছিলে উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন। এ সময় রবিউল ইসলামও সেখানে আসেন। পরে মিছিল নিয়ে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা জেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন।


মিছিলে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক সাকিদার উপস্থিত ছিলেন। তার পিছনে ছিলেন রবিউল ইসলাম।
এ ছাড়া ওই মিছিলে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান তুহিনসহ আরও নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ নিয়ে জানান, একজন হত্যা মামলার আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি আবার বিএনপির একটি অঙ্গ সংগঠনের কর্মীকে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হয়েও স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে ঘুরছেন। এতে বিচারের প্রাপ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একই সাথে এটা স্থানীয়দের জন্য আতঙ্কজনক।


১৭ আগস্টে করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি নওগাঁ-বগুড়া সড়কের আওয়ামীলীগ পার্টি অফিসের সামনে এলে হামলা করা হয়। এতে রাহিম গুলিবিদ্ধ হলে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে গুরুতর আহত রাহিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে(শজিমেক) পাঠানো হয়। ওইদিন রাতেই রাহিমের জরুরী অস্ত্রোপচারের জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯আগস্ট তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক সাকিদার বলেন, রবিউল ইসলাম মিছিলে উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি আমাদের কেউ নন। তিনি দীর্ঘদিন আগে স্বেচ্ছাসেবকদলের পৌর কমিটিতে ছিলেন। কিন্তু বিগত সময়ে রবিউল আমাদের সাথে কখনও ছিলেন না।


মামলার আসামি হয়েও স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে থেকে কোনো সুযোগ নিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নে উপজেলা আহ্বায়ক বলেন, আমাদের দলে এমন কেউ কোনো সুযোগ পাবে না।


এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রবিউলের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।


হত্যা মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও দুপচাঁচিয়া পুলিশের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। দুপচাঁচিয়া থানার ওসি সনাতন চন্দ্র সরকার বলেন, “আবু রায়হান হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার নেই। রবিউল নামে কোনো আসামি স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিলে গিয়েছেন এমন তথ্য নেই আমাদের কাছে।’

হত্যা বা অন্য কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দলে কখনওই স্থান হবে না বলে মন্তব্য করেন জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খাদেমুল ইসলাম খাদেম। তিনি বলেন, “রবিউলকে আমি চিনি না। তবে আমাদের নেতা তারেক রহমানের এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। আন্দোলনে আমাদের যারা নিহত হয়েছেন তাদের হত্যার সাথে জড়িত, যারা দুর্দিনে ভিন্নমতে সুবিধা নিয়ে চলেছেন তাদের দলে কোনো স্থান নেই। এমন কেউ চেষ্টা করলে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিব।’

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button