আজিজুল হক কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের এক প্রভাষকের বিরুদ্ধে ৩০ লাখ টাকা যৌতুকের মামলা করেছেন তার স্ত্রী সিরাজুম মনিরা। বগুড়া সদর আমলী আদালতে গত ২১ আগস্ট এই মামলা করা হয়। মামলাটি আমলে নিয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসামিদের হাজির হওয়ার সমন দেন।
মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার কোলগ্রাম এলাকার গোলাম রাব্বী (৩৩)। তিনি বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এবং বিসিএস ৩৬ ব্যাচের ক্যাডার।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পারিবারিকভাবে সিরাজুম মনিরাকে বিয়ে করেন গোলাম রাব্বী। ওই সময় স্বর্ণালঙ্কার ও ঘরের আসবাবপত্রসহ বিয়ের অনুষ্ঠানে ২০ লাখ টাকা খরচ করেন সিরাজুম মনিরার পরিবার।
কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকে যৌতুকের দাবিতে সিরাজুম মনিরাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন গোলাম রাব্বী ও তার পরিবার। এমন অবস্থা চলাকালে ভুক্তভোগী নারী তার স্বামীর সঙ্গে ফারজানা নিশাত নামে এক মেয়ের সম্পর্কের বিষয় জানতে পারেন। এই বিষয় টের পাওয়ায় সিরাজুম মনিরার ওপর নির্যাতন আরও বেড়ে যায়।
এক পর্যায়ে ফারজানার নিশাতের সন্ধান পেয়ে চলতি বছরের ৯ মে ওই বিষয়ে নিরাপত্তার জন্য সিরাজগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সিরাজুম মনিরা।জিডির বিষয়টি জানতে পেরে স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন গোলাম রাব্বী। এরপর থেকে এই নারী বগুড়া শহরের তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন।
দীর্ঘদিন পার হলেও বাদি খোঁজ খবর না নেওয়ায় কিংবা কোনরুপ ভরণ-পোষন না দেয়ায় বিষয়টি আপোষ মিমাংসার গোলাম রাব্বী ও তার পরিবারকে দাওয়াত করেন বাদীর বাবা সিরাজুল ইসলাম। চলতি মাসের ২ তারিখে তারা এসে একই রুপ কারগাড়ি ক্রয়ের জন্য ৩০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি জানিয়ে চলে যান। একই সঙ্গে হুমকি দিয়ে যান এই টাকা নদেয়া হলে সিরাজুম মনিরাকে নিয়ে সংসার করবে। না হলে তালাক দিয়ে দিবেন গোলাম রাব্বী।
মামলার নথি ঘেটে জানা যায়, চলতি বছরের গত ৪ জুন সিরাজগঞ্জ সদর থানায় করা সেই জিডির তদন্তের ভার পান ওই থানার আওতাধীন সিরাজগঞ্জ ফাড়ির এসআই জাকারিয়া খান। তার তদন্তেও গোলাম রাব্বীর সঙ্গে ফারজানা নিশাত নামে এক নারীর সম্পর্কের বিষয়টি উঠে আসে। ২৫ জুলাই এই জিডির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন এসআই জাকারিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোলাম রাব্বী ও নিশাতের মোবাইল নম্বরের সিডিআর সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়। এতে দুজনের মধ্যেকার কথার তথ্য প্রমান পাওয়া যায়। তদন্তকালে নিশাতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। নিশাতকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, প্রায় একবৎসর আগে ২০২৩ সালের জুন মাসে দিকে গোলাম রাব্বির সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। নিশাতকে পরিচয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে গোলাম রাব্বী জানিয়েছিলেন যে তিনি তার স্ত্রী সিরাজুম মনিরাকে তালাক দিয়েছেন।
পরবর্তীতে কিছুদিন পর কোনো মাধ্যমে নিশাত জানতে পারেন যে গোলাম রাব্বীর স্ত্রী বর্তমান। তাকে তালাক দেয়া হয়নি। তখন নিশাত ২০২৪ সালের শুরুর দিকে গোলাম রাব্বীর সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে গোলাম রাব্বী তার স্ত্রী সিরাজুম মনিরাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি হুমকি প্রদর্শন করে।
মামলার বাদি সিরাজুম মনিরা জানান, আমার স্বামী বিয়ের আগে বলেছিল কোনো যৌতুক তারা নিবেন না। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই তারা যৌতুক দাবি করে আসছেন। আমার স্বামী বিভিন্ন সময়ে আমাকে মেরে ফেলাসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। আমি তাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলাম আর সংসার করতে চাই বলেই এতদিন চুপ ছিলাম। সবশেষ তার সঙ্গে একটি মেয়ের সম্পর্কের বিষয় উঠে আসে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেন আজিজুল হক কলেজের প্রভাষক গোলাম রাব্বী। তার দাবি, চলতি মাসের ১৮ তারিখে তিনি সিরাজুম মনিরাকে তালাক দিয়েছেন। তার সঙ্গে কোনো দাম্পত্য সম্পর্ক নেই।
তালাক দেয়ার কারণ সম্পর্কে গোলাম রাব্বী বলেন, আমাদের মধ্যে পারিবারিক বনিবনা হচ্ছিল না। সে আমাদের গ্রামের বাড়িতে থাকতে চায় না। আসলে তার সঙ্গে আমার সংসার হচ্ছিল না।
আর পরকিয়ার বিষয়টিও সিরাজুম মনিরা ও তার পরিবারের কারসাজি দাবি করেন গোলাম রাব্বী। তার ভাষ্য, তাকে ফাঁসানোর জন্য প্রেমের নাটক সাজানো হয়েছিল।
যৌতুক মামলার আইনজীবী জহুরুল ইসলাম জিয়া বলেন, ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় মামলাটি হয়েছে।সদর আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মোমিন আগামি ২৪ অক্টোবর মামলার আসামিদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।