প্রধান খবরবগুড়া জেলাশিক্ষা

বগুড়া আইন কলেজে ফরম ফিলাপের নামে অতিরিক্ত ৩৯০০ টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়া আইন কলেজে ফরম ফিলাপের নামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত হিসাবের চেয়ে অতিরিক্ত ৩৯০০ টকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কোন খাতে এই অতিরিক্ত অর্থ নেয়া হচ্ছে কলেজের রশিদেও সেটি উল্লেখ করা হয়নি।


এ ঘটনায় গত বুধবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের বিষয়টি জানতে চেয়ে আবেদন করে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে।


তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, অতিরিক্ত টাকা যৌক্তিক কারণে নেয়া হচ্ছে।


শিক্ষার্থীরা জানায়, সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত আইন কলেজগুলোয় ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন্য নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশ অনুযায়ী বগুড়া আইন কলেজেও ফরম ফিলাপের কাজ শুরু হয়। নির্দেশনা মোতাবেক বগুড়া আইন কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা ফরম ফিলাপ বাবদ সাত হাজার টাকা জমা দেন।পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিষয়ে নোটিশ থেকে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন ফরম ফিলাপের জন্য প্রতি পত্রের ৩০০ টাকা, ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০০ টাকা ও কেন্দ্র ফি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতি পত্র ৩০০ টাকা করে হলে ৭ টি বিষয়ে মোট ২১০০ টাকা হয়। ট্রান্সক্রিপ্ট ও কেন্দ্র ফি মিলে ১০০০ টাকা হলে ফরম ফিলাপে মোট মূল্যের পরিমাণ হয় ৩১০০ টাকা। কিন্তু ফরম ফিলাপ বাবদ অর্থের বাইরে যে টাকা নেয়া হচ্ছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই।

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান জানান, আমরা যখন ভর্তি হই তখনই ১২,৬০০ টাকা জমা দিয়েছি কলেজে। তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছিল বেতন অগ্রিম নিয়ে নেয়া হয়। তাহলে এখন আমাদের কাছে থেকে কোন যুক্তিতে আবার বেতন নিবেন তারা? আমাদের সেশনে ২৭০ জন শিক্ষার্থী আছেন। সবার কাছে থেকে ৭০০০ টাকা করে নিলে বাড়তি অন্তত সাড়ে ১০ লাখ টাকা জমা থাকছে কলেজ ফান্ডে। এই টাকা কোন খাতে নিল আর কোন খাতে খরচ করছে তার হিসাব দিক শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থী শরিফুর রহমান জানান, জয়পুরহাট কলেজে নিয়েছে ১০০০০টাকা। তেমনি চট্টগ্রাম আইন কলেজে ৩৭০০ টাকা নেয়া হয়েছে। তার মানে কলেজ চাইলে টাকা কম নিতে পারে। এই জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করছি এর সুষ্ঠু ব্যবস্থা হবে।

কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া আইন কলেজে শিক্ষার্থীর সিট সংখ্যা ৩২৫। পাঠদানের জন্য শিক্ষক নিয়োজিত আছেন সাত জন। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছে ২৭০ জন। এ ছাড়া চলতি বছরসহ আরও তিন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আইন বিষয়ে লেখা পড়া করছেন।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে ফরম ফিলাপ বাবদ ৭০০০ টাকা জমা নিলে কলেজে অতিরিক্ত অর্থ জমা হয় ৩৯০০ টাকা। ২৭০ শিক্ষার্থী হিসেবে কলেজে মোট জমা হয় ১০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

বগুড়া আইন কলেজের হেডক্লার্ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটা তো সরকারি বা এমপিওভুক্ত কলেজ না। ফরম ফিলাপ-ভর্তি এই টাকা পয়সাতেই এই কলেজের সমস্ত কার্যক্রম চলে। শিক্ষকদের সম্মানী বেতন, ইউনিভার্সিটি ফিসহ আনুসাঙ্গিক সব কিছু এই টাকার উপরেই চলে। শিক্ষকদের বেতনের টাকা তো ভর্তির সময় এবং দ্বিতীয় বর্ষে গিয়ে একবারে সেশন চার্জ নেয়া হয় যতটুকু জানি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই সময় টাকা নেয়ার পর তো আর মাসিক কোন টাকা নেয়া হয় না। তবে ফরম ফিলাপের সময় ডেভেলপমেন্ট ফি, বিদ্যুৎ বিল এসব ধরে নেয়া হয়।


এসব খাতের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয় বলছেন, সেগুলো কি রশিদের উল্লেখ করা হয়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, রশিদের উল্লেখ নেই, তবে কেউ চাইলে রশিদে উল্লেখ করে দেয়া হয়।

ফরম ফিলাপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি দেখার জন্য অধ্যক্ষ আল মাহমুদ দায়িত্ব দিয়েছেন বলে দাবি করেন বগুড়া আইন কলেজের সহকারী শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ।

তিনি জানান, বগুড়া আইন কলেজে কোনো বরাদ্দ নেই। শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে পাওয়া বেতন ও ফরম ফিলাপের সময় নেয়া টাকার ওপরই প্রতিষ্ঠান চলে। এখান থেকেই শিক্ষকদের বেতন, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের বেঞ্চ তৈরিসহ যাবতীয় কাজে ব্যয় করা হয়। গত তিন বছর ধরে আমরা এই টাকা নিচ্ছি। এর আগে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা নেয়া হতো।


মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি পাশের জেলার জয়পুরহাট আইন কলেজে সবাই ১০ হাজার টাকা দিয়ে ফরম ফিলাপ করেছে। তারা এত টাকা দিয়ে করতে পারলে বগুড়ায় তো সমস্যা হওয়া কথা নয়। আমরা এই টাকার কোনো অনিয়ম করি না। শিক্ষার্থীরা যেটা জানতে চেয়েছে সেটার একটা সুষ্ঠু সমাধান করা হবে।


তবে বগুড়া আইন কলেজের শিক্ষকদের বেতনসহ বাৎসরিক কত টাকা ব্যয় হয় এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো তথ্য দিতে পারেননি মোস্তাক আহমেদ।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button