গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ-সংরক্ষণ নিয়ে বগুড়ায় কর্মশালা
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি বছর পেঁয়াজের দেশীয় চাহিদার একটি বড় অংশের ঘাটতি থাকে। কিন্তু রবি মৌসুমে পেঁয়াজ আবাদ করে এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব নয়। কারণ চাষের জন্য পর্যাপ্ত জমির সংকট রয়েছে। তবে গ্রীষ্মকালীন জাতের পেঁয়াজ চাষে এই সুযোগ লাগানো সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
এ লক্ষ্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কর্মশালার আয়োজন করেছে বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্র।
বৃহস্পতিবার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত গবেষণা কেন্দ্রের সেমিনার কক্ষে দিনব্যাপী এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বছরব্যাপি কন্দ উৎপাদন, সংগ্রহত্তোর ক্ষতি হ্রাস ও সংরক্ষণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিস্তারে এক কর্মসূচি নিয়েছে শিবগঞ্জ মসলা গবেষণা কেন্দ্র।
এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে কৃষকদের প্রযুক্তিটি নিয়ে ধারণা দেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন গাজীপুরের বিএআরআইয়ের প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ উইংয়ের পরিচালক ড. মুহাম্মদ আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সরকার শফি উদ্দিন আহমেদ।
শিবগঞ্জ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ জুলফিকার হায়দার প্রধানের সভাপতিত্বে প্রযুক্তিটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন কর্মসূচি পরিচালক ড. নুর আলম চৌধুরী, ড. মাসুদ আলম, আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র গাজীপুরের পিএসও ড. মোহা. মাসুদুল হক।
কর্মশালায় কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পেঁয়াজকে পলিটিক্যাল ফসল বলা হয়। দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৪০ লাখ টন। এর বিপরীতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী উৎপাদন হয় মাত্র প্রায় ২৬ লাখ টন। ফলে প্রতি বছর গড়ে ৫০০-১০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানী করতে হয়। শীতকালীন পেঁয়াজ দিয়ে এ ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়। কারন রবি মৌসুমে অন্য ফসল থাকায় এরিয়া বাড়ানো সম্ভব নয়।
দেশের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্র গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ (বারি পেঁয়াজ-৫) উদ্ভাবন করে। এই জাত সারাবছর বানিজ্যিকভাবে, বসতবাড়ীতে এবং ছাদ বাগানে চাষ করে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটানো সম্ভব।
কৃষি গবেষকরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের ফলন শীতকালীন পেঁয়াজের তুলনায় ২ থেকে আড়াই গুন বেশী। কিন্তু এর সংরক্ষণ ক্ষমতা কম, সর্বোচ্চ আড়াই মাস। আবার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে না পারার জন্য বীজ উৎপাদনেও কিছু সমস্যা পোহাতে হয়। এর ফলে এটি কৃষক পর্যায়ে দ্রুত বিস্তারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বছরব্যাপি কন্দ উৎপাদন, সংগ্রহত্তোর ক্ষতি হ্রাস ও সংরক্ষণ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে কৃষকদের সেই সংকট দূর করা সহজ হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। এই প্রযুক্তিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ৬ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব। পেঁয়াজের বাল্বের অঙ্কুরোদগম মাত্রাও খুব কম।
এই কর্মশালায় মসলা গবেষণা কেন্দ্রের একাধিক কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা অংশগ্রহণ করেন।এর আগে গতকাল বুধবার কৃষকদের মাঝে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চারা বিতরণ করা হয়।