বগুড়ায় বিনা সুদে ঋণের প্রলোভন, টাকার বিনিময়ে সদস্য সংগ্রহ
নাজমুল হুদা নয়ন (শেরপুর প্রতিনিধি): গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের কতিপয় মন্ত্রী-এমপি, আমলা ও ব্যবসায়ীদের অবৈধ অর্থ উদ্ধার করে বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হবে গরীব মানুষদের। এমন মুখরোচক কথা সাজিয়ে গত রবিবার (২০ অক্টোবর) বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন।
তবে সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকে সদস্য(ঋণ গ্রহীতা) শত শত নারী পুরুষের উপস্থিতি ঘটালেও দেখা মেলেনি আয়োজক কর্তৃপক্ষের কাউকে।
এর আগে বিনা সুদে ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামে গ্রামে টাকার বিনিময়ে হাজার হাজার সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপস্থিত জনসাধারণ।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বগুড়ার শেরপুরের পৌর শহরের সরকারি ডি, জে হাইস্কুল খেলার মাঠে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের আহবানে শত শত মানুষ সমবেত হচ্ছেন। শুধু শেরপুর উপজেলারই নয়, জেলার শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম এমনকি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ উপজেলা থেকেও শত শত নারী-পুরুষ এ স্থলে এসেছেন বলে তারা দাবি করেন। তাছাড়া প্রায় একবছর ধরে সংগঠনের নির্ধারিত একটি ফরমে সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর জন্য ২০ টাকা থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার করে বিনা জামানত ও সুদে ১ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে সদস্যদের। সেই টাকা তারা প্রতি লাখে মাসিক এক হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করবেন। কিন্তু নির্ধারিত স্থানে ও সময়ে আয়োজকদের না পেয়ে হতাশ ও বিক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে গেছেন ভূক্তভোগীরা।
শাহজাহানপুর উপজেলার কচুয়াদহ গ্রামের কল্পনা আক্তারলো বলেন, প্রায় ৬ মাস আগে কিছু মহিলা আমাদের গ্রামে যায় ফরম পূরণ করার জন্য। আমাদের গ্রামের প্রায় ৭শ মানুষ এই সংগঠনের সদস্য হয়েছে। সবার কাছ থেকে ৩০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। আজ আমরা প্রায় দেড়’শ জন এসেছি।
শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের জোয়ানপুর গ্রামের আলামিন বলেন, তাদের গ্রামের প্রায় ৫শ জনের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। বিশালপুর ইউনিয়নের বিরাকৈর গ্রামের আনোয়ারা বেগম (৫৫) বলেন, তাদের গ্রাম থেকে প্রায় একশ জন এসেছেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে সদস্য ফি ২শ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
শেরপুর পৌর শহরের টাউন কলোনী এলাকার হাফিজার রহমান বলেন, প্রায় ৬ মাস আগে ৩০ টাকা দিয়ে সদস্য হয়েছি। গতকাল মাইকিং শুনে এখানে এসে আজ কাউকে পাচ্ছি না।
উপস্থিত অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিনা জামানত ও সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলে গত এক বছর ধরে হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র। তবে কারা এই চক্রের হোতা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। যারা এই ফরম পূরণ করেছেন তাদের কেউ চেনে না। তবে উপস্থিত একজনের কাছে পাওয়া যায় একটি মোবাইল নম্বর। তার সাথে মোবাইলে কথা বললে তিনি নিজেকে শাহানাজ আফরিন সুমি বলে পরিচয় দেন।
সুমি বলেন, আমি আয়োজকদের কেউ নই। আমরা শেরপুরে প্রায় ২শ জন কাজ করেছি। আমরা সবাই সমান। গরিব মানুষের উপকারের জন্য বিনামূল্যে সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কেউ টাকা নিয়ে থাকলে আমরা দায়ি নই।
আজকের অনুষ্ঠানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান সহ অনেকেই উপস্থিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু অসুস্থতার জন্য কেউ আসেনি। তাছাড়া সমাবেশ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া যায়নি। তাই সাবইকে ফিরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে তিনি দাবী করেন।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশিক খান বলেন, ওই খেলার মাঠে ‘‘সমাবেশের অনুমতি চেয়ে সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফিরোজা বেগম একটি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু দেওয়া হয়নি।” তরে তাদের প্রতারণা সংক্রান্ত কোন অভিযোগ আমার জানা নেই। তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।