প্রধান খবরসারিয়াকান্দি উপজেলা

সারিয়াকান্দিতে ‘কুমড়ো বড়ি’ তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা

সুমন কুমার সাহা (সারিয়াকান্দি প্রতিনিধি): শীতের মৌসুমে রান্নায় কুমড়ো বড়ি যোগ করে আলাদা এক স্বাদ। সম্পূর্ণ নারীদের হাতের ছোঁয়ায় অতি সুস্বাদু এই খাবারটি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌরসভার নিজবাটিয়াও বাগবেড় গ্রামের নারীরা। বংশ পরম্পরায় বছরের পর বছর ধরে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে আসছে এ এলাকায় বাসিন্দা।

আনুমানিক ৫০টি পরিবারের নারীরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজ করে। এক জন নারী প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ১০ কেজি কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে পারেন।

পৌরসভার সাহাপাড়া গ্রামের দুই ও সাত নং ওয়ার্ডের শংকরি রানী, বনিতা সাহা, অর্না সাহা, সাথি সাহা, শ্যামলি দেবনাথ, ডলি সাহা, সাধনা সূত্রধর রেবা সাহা, মুনজুরী , নিহার রানী সাহা, গীতা রানী সঙ্গে কথা বলে জানা যায় , বাংলা মাসের কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এ কুমড়ো বড়ির চাহিদা বেশি থাকে।

গতবারের থেকে এবার আগাম অক্টোবর মাস থেকে বড়ি তৈরি শুরু হয়েছে। চলবে মার্চ মাস পর্যন্ত। গত বছরে অক্টোবরে মাসকালাই এর ডাল প্রতি কেজি ১৩০ টাকা দাম ছিল। এ বছর এ ডাল ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে।

গত বছর সাধারণ মানের কুমড়ো বড়ি ১৫০ টাকা এবং ভালো মানেরটা ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল । এবার সাধারণ মানের কুমড়ো বড়ি ২০০ টাকা এবং ভালো মানের বড়ি ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।একেকজন কারিগর দিনে ১২’শত টাকা থেকে ১৫’শত টাকা পর্যন্ত কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে থাকেন।

শীত মৌসুমে এ এলাকায় প্রায় ১২ থেকে ১৪ লক্ষ টাকার কুমড়ো বড়ি বেচা-কেনা হয়ে থাকে। এই কুমড়ো বড়ি তৈরি করে পরিবারের নারী সদস্যরা, আর পুরুষরা হাঁট-বাজারে বিক্রি করে ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পৌর এলাকার সাহাপাড়ার নারীরা। কুমড়ো বড়ি তৈরির একমাত্র প্রধান উপাদান হলো মাসকলাই ডাল। বড়ি বানানোর সহজ কোনো বিষয় নয়। এখানে একাধিক ধাপ রয়েছে। প্রথমে মাসকালাই যাতায় পিষে অর্ধেক করতে হয়। খোষা ছাড়ানোর জন্য সন্ধ্যায় সারা রাতের জন্য জলে ভিজে রাখতে হয়। ভোরে ভিজানো কালাই থেকে খোষা ছাড়িয়ে শিলপাটায় পিষে খামির তৈরি করতে হয়। সকাল হলে সেই খামির ফেনিয়ে কাপড় বা নেটের ওপরে কুমড়ো বড়ি তৈরি করা হয়। পরে সেটি দুই থেকে তিন দিন রোদে শুকানোর পর এসব কুমড়ো বড়ি বিক্রির জন্য উপযুক্ত হয়। পরে পাইকারী বিক্রিসহ স্থানীয় হাট-বাজারে খুচরা বিক্রি করেন কারিগররা।

কুমড়ো বড়ির কারিগররা জানায়, আমাদের গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় অধিকাংশ মানুষেরই তেমন কোনো জমি-জমা নেই। শীতের এ মৌসুমে কুমড়ো বড়ি বিক্রি বেশি হয়। ধারাবাহিকভাবে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি এ কুমড়ো বড়ি তৈরির করছি।

এ বছর উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাটবাজারে কুমড়ো বড়ি বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি করতে হচ্ছে। অনেকেই দেশ-বিদেশে স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে থাকেন হাতে তৈরি এ বড়ি। আবহাওয়া ভালো না হলে কুমড়াবড়ি তৈরিতে ধস নামে। তখন বড়ি প্রস্তুত করতে অনেক সময় লাগে। বড়ি নষ্ট হয়ে যায়।

তারা আরও জানান, বাজারে কলাইয়ের দাম বেশি এবং হাড়ভাঙা পরিশ্রমে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বিক্রির পর এখন আর আগের মতো তেমন একটা লাভ হয় না। সরকারি সহজসর্থে ঋণ পেলে আমরা আরও বেশি কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে পারবো এবং আরও বেশি উন্নতমানের কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে পারবো।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button