প্রধান খবরবগুড়া জেলারাজনীতি

আমরা বৈষম্যহীন তারুণ্যনির্ভর দেশ গড়তে চাই: বগুড়ায় ড. শফিকুর

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমীর ড. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা এই বাংলাদেশকে বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, তারুণ্যনির্ভর ও মানবিক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা পাশে থাকবেন, ওয়াচডগ হিসেবে।’

শনিবার বিকেলে বগুড়ার আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এক সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন। জামায়াতের শহর শাখার আমীর অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী অধ্যাপক আ স ম আব্দুল মালেকের পরিচালনায় সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী।

সমাবেশে শফিকুর রহমান রহমান বলেন, ২০০৯ সালে বিডিআরের হেডকোয়ার্টার পিলখানায় যে ৫৭ জন চৌকস দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই দেশে জুলুমের রাজত্ব শুরু হয়েছিল। যার সমাপ্তি হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট; যেটাকে আমরা জুলাই এবং আগস্ট বিপ্লব বলছি। সেখানে শত শত যুবককে অন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, মেরুদণ্ডে গুলি করে অবশ করে দেওয়া হয়েছে। যারা আর কোনদিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বেশি বেশি করে বলতেন আর ফেরি করতেন, তারাই এদেশের যুবকদের জীবন্ত শহীদে পরিণত করেছেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে দল ১৮ কোটি জনগণের দিকে গুলি ছুড়েছিল, সেই জনগণের কাছে তাদের আর ভোট চাওয়ার কোন নৈতিক অধিকার নাই। তাদের নাম আর বাংলাদেশের জনগণ শুনতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যাদের গুলির পরোয়া করেনি, সেই দুর্ধর্ষ খুনিদের এদেশের মাটিতে মানুষ আর প্রকাশ্যে হাটতে দিবে না। এর আগে সকালে একই স্থানে শফিকুর রহমান জামায়াতের শহর ও জেলা শাখার রুকন সম্মেলনেও প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

জামায়াত শফিকুর রহমান বলেন, আপনারা বলতেন আমরা পালাব না। আপনারা বলতেন ওমুকের মেয়ে পালায় না। পরে কি হলো বলেন? আমরা কি আপনাদের তাড়া করেছিলাম! ভালো মানুষ দেশ থেকে পালায় না। ভালো মানুষের দেশ থেকে পালানোর প্রশ্নই ওঠে না।
তিনি আরও বলেন, যে শিশু সে ধনী ঘরে জন্ম নিয়েছে, নাকি গরীবের ঘরে-তা প্রশ্ন নয়। তার চারটি অধিকার তার রাষ্ট্রকে দিতেই হবে। এক নম্বর তার খাওয়া-বাচার অধিকার, দুই নম্বর তার চিকিৎসার অধিকার, তিন নম্বর হচ্ছে শিক্ষার অধিকার, চার নম্বর হচ্ছে তার কাজ পাওয়ার অধিকার।

‘আমরা চাই না এই জাতিকে আর কেউ বিভক্ত করুক। আমরা মেজরিটি মাইনরিটি শব্দ শুনতেই চাই না। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছেন তারাই বাংলাদেশের গর্বিত মর্যাদাবান নাগরিক। ধর্ম যারা যার, প্রিয় দেশটি সবার। সুতরাং সকল ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে তাদের উপাসনা করবে।এখানে অন্য ধর্মের কেউ তাদের দিকে চোখ রাঙাতে পারবে না।’

জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, “যদি মুসলমানদের মসজিদে পাহারা দেয়ার প্রয়োজন না হয়ে থাকে, তবে মন্দির পাহারা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। তারা শান্তিতে সেখানে তাদের উপাসনা করবে। প্রিয় ভাইয়েরা মহান আল্লাহতায়ার ওপর ভরসা করে আমরা বলতে চাই, জামায়াত ইসলামী সেই দল যার বিরুদ্ধে কোনো মানুষের এক ইঞ্চি জমি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ নেই। এই দলের বিরুদ্ধে কোনো মা-বোনের ইজ্জত লুটের অভিযোগ নেই। এই দলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই। দখলবাজির অভিযোগ নেই।”

“আমরা আগামীর বাংলাদেশ তাদের হাতে তুলে দিতে চাই। আমরা আমাদের তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীদের এমন শিক্ষা দিতে চাই। যেই শিক্ষা তাদের মানুষ হতে শিখাবে। আল্লাহকে ভয় করতে শেখাবে। দেশকে ভালোবাসতে শেখাবে। মানুষকে ভালোবাসতে শেখাবে।”
সুধী সমাবেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা ওই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেই বাংলাদেশে কোনো বিচারকের চেয়ারে কোনো দুর্বৃত্ত ঘুষ খাওয়ার চিন্তা করতে পারবে না। শ্রমিকদের তার ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পর, বেতনের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে না। সেখানে শ্রমিকের সঙ্গে মালিকের বন্ধুর মতো সম্পর্ক হবে। আমরা এই বাংলাদেশকে বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, তারুণ্যনির্ভর ও মানবিক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা পাশে থাকবেন, ওয়াচডগ হিসেবে।’

জামায়াতে ইসলামীর বগুড়া শহর শাখার আমীর অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলান খান, বগুড়া জেলা শাখার সাবেক আমীর অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন ও বর্তমান আমীর মাওলানা আব্দুল হকসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button