বগুড়ায় ইউপি সদস্যকে বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলার ‘হুমকি’ দিলেন ইউএনও
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে রিপন মাহমুদ বিতান নামে এক ইউপি সদস্যকে বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। যমুনা নদীর চরের কাশবন বিক্রি নিয়ে দুপক্ষের এক দ্বন্দ্বের মিমাংসার বিষয়ে কথোপকথনের এক পর্যায়ে এমন কথা বলেন ইউএনও।
গত সোমবার দুপুরে মোবাইলে এই হুমকি দেয়া হয় বলে জানান রিপন মাহমুদ। এর পর থেকে উপজেলায় বিষয়টি নিশ্চিত আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
রিপন মাহমুদ বিতান সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক, সদর ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
স্থানীয় চরবাসীদের সূত্রে জানা যায়, যমুনা চরে শত-শত একর জমিতে প্রতি বছর কাশবন হয়। এসব কাশবন যাদের জমি থাকে তারা বাপ দাদার আমল থেকেই ভোগ দখল করে আসছে। যেহেতু এসব কাশবন মহিশ মালিকদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে একটা ভালো মানের টাকা পাওয়া যায়। এই কারনে সবারি এই জমি গুলোর দিকে দৃষ্টি থাকে। প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের মাঝে একটা প্রতিযোগিতা চলে কে কতটুকু জমি দখল করে বিক্রি করতে পারে মহিশের মালিকদের কাছে। আর এখানে প্রশাসনের কিছু লোকের ভালো মানের অর্থ আসে এ কারনে এরা সবসময় প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের পক্ষে থাকে এতে সত্য মিথ্যা ন্যায়নীতির ধার ধারে না তারা। এবারো কয়েক লক্ষ টাকা বিক্রি হয়ে গেছে এই কাশবন গুলো মহিষের বাথান মালিকদের সাথে। মুল মালিকরা টাকা না পাওয়ায় শুরু হয়ে যায় গন্ডগোল ও অভিযোগ।
রিপন মাহমুদ বিতান মেম্বার জানান, সারিয়াকান্দি পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি লাল মাহমুদ নিজের ইচ্ছে মতো যমুনার চরে প্রায় কয়েক শ’ বিঘার কাশবন বিক্রয় করে দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের মতো যাদের জমি আছে তারা বিষয়টি জানেই না। আমরা যখন জানতে পারলাম তখন কাশবনে অবস্থানরত মহিষ বাথানের মালিকদের সাথে কথা বলে তাদের মহিষগুলোকে সরিয়ে দেই। এ ঘটনায় পর লাল মাহমুদ থানা থেকে পুলিশ নিয়ে গিয়ে আবারো মহিষের বাথান মালিকদেরকে কাশবনে যেতে বলেন।
এসব ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে আমি কালিতলা বাঁধের পাশে চা-স্টলে বসে ছিলাম এমন সময় কাশবনে যে পুলিশ কর্মকর্তা গিয়েছিলেন তিনি আমাকে বলে যে, তাকে আসলে (ইউএনও) স্যার পাঠাইছে। এসআই আমাকে (ইউএনও) স্যারের এর সাথে কথা বলতে বলেন। আমি সে অনুযায়ী কিছুক্ষন পরে (ইউএনও) সাহেবের কাছে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
ওই সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান তাকে ফোন দেন বলে দাবি করেন রিপন মাহমুদ।
রিপন বলেন, চরের কাশবনের বিষয়ে নানা ধরনের কথা বলার এক পর্যায়ে ইউএনও বলেন যে,আমার কথা না শুনলে বস্তা ভরে যমুনার পানিতে ফেলে দিবো।
পরবর্তীতে গতকাল বুধবার আবার লাল মাহমুদ মাইক ভাড়া নিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছিলো সেটা আমি প্রশানকে অবগত করি।
জানতে চাইলে লাল মাহমুদ বললে, যমুনার চরে আমাদের প্রায় ১০০ বিঘা জমি আছে। ওইসব জমি ১ নম্বর খতিয়ানে ছিলো, এখন চর জেগেছে সেখানে কাশবন হয়েছে। ১০০ বিঘা মধ্যে প্রায় ৪০ বিঘা জমির কাশবন আমরা মহিষ মালিকদের কাছে দিয়েছে কিন্তু এসব নিয়ে বিতান মেম্বার ঝামেলা সৃষ্টি করেন। আমার এক ভাতিজা শ্রমিক দলের নেতা তাকে মারধর করে। এ কারনে তারা দুইটি মাইক ভাড়া নিয়ে প্রতিবাদ প্রচারনা চালায় ও সাংবাদিক সম্মেলন করার প্রস্তুতি নেয়। তবে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতারা নিষেধ করায় আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তারা বলেছেন যে যদি আমাদের সালিস মন মতো না হয় তখন সেটা বলেন।
লাল মাহমুদ আরো বলেন, চরের মানুষের চর দখল করাই কাজ। আমাদের অনেক জমাজমি ছিল কিন্তু আমরা কোনদিন খোঁজ নিতে যাইনি। এখন চর জেগেছে একারনে চরে গিয়েছি।
তবে হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, বিষয়টা ও রকম না। এমন কিছু আমি বলিনি। দুপক্ষের ঝামেলা নিয়ে বসেছিলাম। বলেছি দু পক্ষ বসে কথা বলে ঝামেলা মিটাতে।