তিন বিষয়ে পরীক্ষা দিতে চায় না বগুড়ার ভিএম স্কুলের শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: মাধ্যমিক পর্যায়ে চলতি শিক্ষাক্রমের তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল চেয়ে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (ভিএম স্কুল) শিক্ষার্থীরা। বিষয় তিনটি হলো জীবন ও জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। তবে বাকি বিষয়গুলোয় পরীক্ষা দিতে কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়টির ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বগুড়া জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে জানা যায়, জীবন ও জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি এই তিনটি বিষয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ এর আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তক। তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকার পতন হলে বিভিন্ন খাতে পরিবর্তন শুরু হয়। এই ধারাবাহিকতায় জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তনেও হাওয়া লাগে।
জানা যায়, শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ২৩ দিনের মাথায় নতুন শিক্ষাক্রম বা জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সেই সময় মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। তাই ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করে ২০২৬ সাল থেকে তা পরিপূর্ণরূপে কার্যকর করা হবে। এর আগে ২০২৫ সালে শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্বের ২০১২ সালের প্রণীত সৃজনশীল কারিকুলাম ধাঁচের পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য চলমান বছরে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে পরীক্ষা হবে নতুন শিক্ষাক্রমের অনুসারেই। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এনসিটিবি থেকে পরীক্ষার নিয়ম ও নমুনা প্রশ্ন দেয়া হয় বিদ্যালয়গুলোয়।
এনসিটিবির নিয়ম বলছে, মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিন ঘণ্টার বার্ষিক পরীক্ষায় বসতে হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের বই অনুসারেই এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
তবে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মূল্যায়নে শিখনকালীন মূল্যায়নও থাকছে। প্রতিটি বিষয়ে ৭০ শতাংশ নম্বর বার্ষিক পরীক্ষা থেকে এবং ৩০ শতাংশ নম্বর শিখনকালীন মূল্যায়নের ভিত্তিতে পাবেন শিক্ষার্থীরা।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কার্যক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং বার্ষিক পরীক্ষা দুটি ভাগে অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম শ্রেণির শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং বার্ষিক পরীক্ষা জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ এর আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে সম্পন্ন হবে।
নমুনা প্রশ্ন পাওয়ার দু মাসের মাথায় শিক্ষার্থীদের মাঝে পরীক্ষার নিয়ম নিয়ে ভীতি দেখা দেয়। বগুড়ার অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা এমন পদ্ধতিতে পরীক্ষার বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দে পড়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সরব হতে পারছে না। এর মধ্যে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসে।
এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবেদন পত্রে জানায়, ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেনির শিক্ষার্থীরা জুলাই পর্যন্ত নতুন কারিকুলামের মধ্যে ছিল হঠাৎ করে প্রশ্নের ধরন বদলে যাওয়ায় আমরা এখনো হিমশিম খাচ্ছি। এছাড়াও জীবন ও জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি এই তিনটা বই আমাদের তেমন গুরত্ব সহকারে পড়ানো হয়নি। আর এই বইগুলো থেকে ১০০ মার্কের পরীক্ষা নিলে আমরা কখনই ভালো ফলাফল করতে পারবো না। তাই জীবন ও জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি এই তিনটি বিষয় বাদ দিয়ে শুধু মূল বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হোক। আইসিটি পরীক্ষা ৫০ মার্কের নেওয়া হোক (সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে।) শেষ সময়ে এসে এই রকম বার বার পরিবর্তন শিল্পার্থীদের মানসিক ও শারীরিক উভয়ের উপরই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
শিক্ষকরা বলছেন, জীবন ও জীবিকা, স্বাস্থ সুরক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয় তিনটি আমাদের মেয়েরা বছরের শুরু থেকে পড়ে আসছে। তাদের পড়ানো হয়নি বিষয়টি সঠিক নয়। এখন নতুন কারিকুলামের কারণে তারা ঘাবড়ে যেতে পারে।
আর মেয়েরা শুধু এই তিনটি বিষয় বাতিল চায়। মূল বিষয়গুলো নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
বাতিলের দাবিতে আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন অর রশিদ।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিনটি বিষয় বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে আবেদন করে। জেলা প্রশাসক সেদিন না থাকায় আগামীকাল রবিবার শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলবেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে চাচ্ছে না। আগের নিয়মে পরীক্ষা হলে হয়তোবা এই দ্বিধা থাকতো না। এনসিটিবি থেকে নমুনা প্রশ্ন দেয়ার পর সেগুলো শিক্ষার্থীদের আমরা দেখিয়েছি। এর মধ্যে দু মাস পেরিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাথে তারা আলোচনা করেনি কখনও। বললে একাধিক স্কুলের শিক্ষকরা মিলে এনসিটিবির সাথে আলোচনা করতে পারতাম। এখন যেহেতু শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছে, তিনি আলোচনা শেষে যেটা ভালো হয় করবেন।