বগুড়ায় আ. লীগের বিরুদ্ধে যুবদলের ওপর হামলা, অভিযুক্ত বলছেন তিনি জামায়াত ইসলামীর
ধুনট প্রতিনিধি: বগুড়ার ধুনটে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এসময় ইউনিয়ন যুবদল নেতা শাহিন আলম, শাহিদ খান ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী লিমন হোসেন গুরুতর আহত হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাত ৮ টার দিকে উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের বিশ্বহরিগাছা বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে রাতেই ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেন হামলার শিকার যুবদল নেতা শাহিদ খান।
অভিযোগ করা হয়, জহুরুল ইসলাম মিলন নামে একজনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে এই হামলা চালান। তবে এমন অভিযোগ নাকচ করে জহুরুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি কখনও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। বরং জহুরুল জামায়াত ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
শনিবার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধুনট থানার ওসি সাইদুল আলম। তিনি জানান, এঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সূত্র বলছে, হামলার ঘটনায় রাতেই যুবদল নেতা শাহিদ খান বাদি হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ অভিযোগ দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জনের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়।
থানায় করা ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে বিশ্বহরিগাছা বাজারে চৌকিবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যোগসাজশে যুবলীগের ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একত্রে জড়ো হয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাজারের পাকা রাস্তার উপরে জয় বাংলা স্লোগান দিতে থাকে। একই সময়ে পাশের একটি চা স্টলে যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী চা পান করেছিলেন। এসময় যুবলীগ নেতা জহুরুল ইসলাম মিলন তাদের সেখানে দেখে বলে বিএনপি ছাত্রদলের কুত্তার বাচ্চাদের ধর। তখন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্যে রাম দা দিয়ে যুবদল নেতা শাহিন আলমের মাথা লক্ষ্য করে স্বজোরে কোপ দেয়। শাহিন আলম হোচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলে কোপ লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে শাহীন আলমের পায়ে লেগে সে গুরুতর আহত হয়। এসময় পাশে থাকা আরেক যুবদল নেতা শাহিদ খানের মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে । তখন ছাত্রদল নেতা লিমন হোসেন তাদের বাধা দিতে গেলে যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাকেও হত্যার উদ্দেশ্যে রাম দা দিয়ে কোপ দিলে তার পায়ে লেগে রক্তাক্ত জখম হয়। তখন তাদের চিৎকারে বাজারের লোকজন এগিয়ে আসলে যুবলীগ নেতাকর্মীরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে আহতদের উদ্ধার করে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়।
যুবদল নেতা শাহিদ খান বলেন, আমরা কয়েকজন নেতাকর্মী বাজারে বসে চা খাচ্ছিলাম। এসময় যুবলীগ নেতা জহুরুল ইসলাম মিলন অতর্কিত ভাবে আমাদের উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। হামলায় আমি, যুবদল নেতা শাহিন আলম ও ছাত্রদল নেতা লিমন হোসেন সহ বেশ কজন আহত হয়েছি।
কিন্তু এই অভিযোগ মিথ্যা দাবি করছেন জহুরুল ইসলাম মিলন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এ ছাড়া আমি এ জীবনে কোনদিন যুবলীগ করিনি। আমাকে যুবলীগ নেতা দেখিয়ে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে। আমি মূলত চৌকিবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পেশাজীবি সংগঠনের সাথে যুক্ত আছি।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে চৌকিবাড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের এক নেতা বলেছেন, জহুরুল ইসলাম মিলন যুবলীগের কেউ নয়। কোনো মিছিল মিটিং এ তাকে সম্পৃক্ত থাকতে দেখিনি তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাথে তার একটা সখ্যতা ছিল। সখ্যতার কারণেই আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের সাথে তার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আছে। তিনি মূলত সুবিধা নিতেই ক্ষমতাবান মানুষের সাথে চলতো।
জহুরুল ইসলামকে নিজেদের সংগঠনের সদস্য বলে নিশ্চিত করেছেন ধুনট উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, জহুরুল ইসলাম মিলন চৌকিবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পেশাজীবি সংগঠনের সাথে যুক্ত আছে। জহুরুল ইসলাম মিলন রাজনৈতিকভাবে আদৌ যুবলীগের সাথে জড়িত ছিল কিনা এটা আমার জানা নেই।