প্রধান খবরশিবগঞ্জ উপজেলা

নবান্নের উৎসব মাতাতে বগুড়ার উথলীর মাছের মেলায় ভীড়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার শিবগঞ্জের উথলীতে হয়ে গেলো নবান্ন উপলক্ষে মাছের মেলা। প্রায় ২০০ বছর ধরে নবান্ন উৎসব কেন্দ্র করে প্রতি বছর উথলীতে মাছের মেলা বসে।

রোববার (১৭ নভেম্বর) সকাল থেকে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতারা বড় মাছ কেনাবেচার জন্য মেলায় ভিড় করে। প্রতি বছর মেলায় এই এক দিনে লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়।

ব্রিটিশ শাসনামলে জমিদার বুৎসিংহের কাছে স্থানীয়রা দাবি করেন হাট স্থাপনের। প্রজাদের কথা শুনে জমিদার প্রায় ৫২ বিঘা জমি হাটের জন্য দান করেন। সেই থেকে বাংলা বছরের ১ অগ্রহায়ণ স্থানটিতে নবান্ন মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

নবান্ন উৎসব ঘিরে উথলী, রথবাড়ী, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, আকনপাড়া, গরীবপুর, দেবীপুর, গুজিয়া, মেদেনীপাড়া, বাকশন, গণেশপুর, রহবল শিবগঞ্জসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ তাদের বাড়িতে করেছেন বিভিন্ন আয়োজন। মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে সেই নিমন্ত্রণে গ্রামগুলোতে আত্মীয়স্বজনের ভিড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রতি বছরের তুলনায় এবার বড় মাছ মেলায় কম উঠেছিলো। আর দামও বেশি মাছের এবার। এবার ছোট ও মাঝারি রুই-কাতলা গড়ে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। চিতল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০০ টাকা দরে। এ ছাড়া ব্ল্যাক কার্প ৪৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, বড় আকারের কাতলা মাছ গড়ে প্রতি কেজি ১০০০, রুই ৮০০, বিগ হেড ৭০০ টাকা কেজি দরে বেচাবিক্রি হয়েছে। পাঙাশ বিক্রি হয়েছে গড়ে ৩০০ টাকা দরে। মেলায় এবার ১৭ কেজি ওজনের একটি কার্প মাছ বিক্রি হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ টাকায়।

নবান্নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আলু এবার প্রতি কেজি নতুন পাকড়ি আলু মেলায় বিক্রি হয়েছে আকারভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। মিষ্টি আলু ও কেশর বিক্রি হয়েছে ২০০-২৫০ টাকায়। মেলায় বসেছে দই, চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, কদমা-বাতাসা, নিমকি, মিঠাই-মিষ্টান্ন, ঝুড়ি, জিলাপিসহ হরেক মিঠাই-মিষ্টান্নের দোকান। শিশুরা নাগরদোলায় চড়ছে, হরেক খেলনা কিনছে। নারীরা ভিড় করেছেন আলতা-চুড়ির দোকানে।পাশাপাশি মাটির বাসনকোসনসহ ছোট বাচ্চাদের খেলনার দোকান নিয়ে হাজির হন ব্যবসায়ীরা।

উথলী গ্রামের খালিদ হাসান বলেন, মেলাটি অনেক পুরনো। মেলাকে ঘিরে লোকজন প্রায় কয়েক মাস আগে থেকে আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে থাকে কেনাকাটা করার জন্য। মেলায় মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেয়া হয়। প্রতিটি বাড়িতেই মেহমান দিয়ে ভরপুর থাকে। একেকটি পরিবারের এ মেলায় খরচ অন্তত ৫ হাজার টাকা। অনেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকাও খরচ করে। যার বাড়িতে যেমন মেহমান আসে, তার বাড়িতে তেমন খরচ।

প্রদীপ মোহন্ত নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, তার বাড়িতে অন্তত ১০ জন মেহমান এসেছেন। আরও আসার কথা রয়েছে। তিনি ৪ কেজি ওজনের সিলভার কার্প মাছ কিনেছেন। মিষ্টি কিনেছেন ৫ কেজি। এছাড়া নতুন আলুসহ বিভিন্ন ধরণের সব কিনেছেন। মাত্র ৪ কেজি মাছ দিয়ে হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা দিয়েই হবে। এছাড়া শুধু আমরা না, বাড়ির মেহমানরাও মেলায় এসে মাছ কেনেন। আজকে আমরা আনন্দ করছি।’

মাছ ব্যবসায়ী উজ্জ্বল বলেন, তিনি ২ লাখ টাকার মাছ এনেছেন। গতবারের তুলনায় এবার মাছের দাম একটু বেশি। তবুও বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতা নারায়ণপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াহাব জানান, মেলায় ছোট-বড় মিলে শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্তত ৫ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন। মেলায় মাছ সরবরাহের জন্য সেখানে রাত থেকে ২০টি আড়ৎ খোলা হয়। সেসব আড়ৎ থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা পাইকারি দরে মাছ কিনে মেলায় খুচরা বিক্রি করেন।

উথলী মেলার ইজারাদার মো. পিয়াস বলেন, মাছ কিনতে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভিড় করেছেন ক্রেতারা। ভোর থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে গভীর রাত পর্যন্ত। এবার মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতার সরগরম ভালো হলেও মাছের সরবরাহ কম। দামও তুলনামূলক এবার বেশি।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button