সারিয়াকান্দিতে এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে এসএসসির ফরম পূরণের নামে শিক্ষার্থীদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত ফিয়ের চেয়ে বাড়তি এই টাকা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে যমুনা নদী পাড়ের প্রান্তিক মানুষদের।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষদের দাবি, শিক্ষাবোর্ডে যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহনের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে এই টাকা নিচ্ছেন তারা। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, এমন টাকা নেয়ার কোনো নিয়ম নেই বিদ্যালয়ের।
সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২ ডিসেম্বর থেকে। চলবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ফরম পূরণে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ফি হচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগে ২ হাজার ২৫৫, মানবিক ও ব্যবসায় বিভাগে ২ হাজার ১৪০ টাকা। এর বাইরে কোনো ফি নেওয়ার বৈধতা নেই।
কিন্তু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে তার উল্টো চিত্র পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৭৫৫ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৫ টাকা ফরম ফিলাপ বাবদ। বাকি অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ অনলাইন ফি, রাজশাহী যাতায়াত খরচ, মডেল টেস্ট, সেশন চার্জসহ নানা অজুহাত দেখাচ্ছে।
উপজেলার কুপতলা আর্দশ উচ্চবিদ্যালয়, আলিনা জাহান বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মন্টু উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে।
কুপতলা উচ্চবিদ্যালয়ের কথা হয় প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ দুখু সঙ্গে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। তার মধ্যে রবিবার (৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ৩০ জন ফরম পূরণ করেছে। যারা ফরম পূরণ করেছে তাদের মধ্যে মানবিক ও ব্যবসায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৬০৫ টাকা করে। অন্যদিকে বিজ্ঞান বিভাগে ফরম পূরণ বাবদ নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৭৫৫ টাকা।
অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ(দুখু)বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার যেহেতু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি।তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে। ফরম ফিলাপের নির্ধারিত টাকা ছাড়াও আরও অনেক জায়গায় টাকা খরচ হয়। সেই জন্য একটু বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে।
বড়ইকান্দির বিকে উচ্চবিদ্যালয় বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, আমার বিদ্যালয়ে মোট পরীক্ষার্থী ১৪৫ জন। এর মধ্যে ১২০ জন ইতিমধ্যে ফরম পূরণ করেছে। এখানেও পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৬০৫ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এখানে কিছু গরীব ছাত্র ছাত্রীদের ফ্রী ফরম ফিলাম করা হয়েছে।
আলিনা জাহান উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আশাদুল ইসলামের কাছে জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানে মোট পরীক্ষার্থী ৩২ জন। এর মধ্যে ২৪ জন ইতিমধ্যে ফরম পূরণ করেছে। তাদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ নিয়েছেন ২ হাজার ৬০৫ টাকা হতে ২ হাজার ৭৫৫ টাকা। এলাকার লোকজন বলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এখন একদম তলানীতে পৌঁছে গেছে।
এসব বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নির্ধারিত ফি দিতেই তাঁদের কষ্ট হয়। সেখানে বাড়তি অর্থ দেওয়া এক প্রকার দুঃসাধ্য। কিন্তু বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহারিয়ার রহমান বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফির বেশি অর্থ আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। রাজশাহী বোর্ডে যাতায়াত ও অনলাইন খরচ স্কুল ফান্ড থেকে দিবে এটা কেন ছাত্রদের থেকে নিবে? বিদ্যালয়ের অন্য কিছু পাওনা থাকলে সেটা নিতে পারে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।