রাতে ঘুমানোর আগে যেসব আমল করবেন
ঘুম একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে শরীর ও আত্মার প্রশান্তি ও পুনরুজ্জীবনের জন্য দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের ঘুমানোর আগে কিছু সুন্নত আমল করার পরামর্শ দিয়েছেন, যা রাতের সময়কে কল্যাণময় ও বরকতময় করে তোলে।
এই প্রবন্ধে আমরা রাতে ঘুমানোর আগে যেসব আমল করতে হবে, তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
১. ওজু করা
ঘুমানোর আগে ওজু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ঘুমায়, তার সাথে একজন ফেরেশতা থাকে। সে ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করে: হে আল্লাহ! এ বান্দাকে মাফ করে দাও, কারণ সে পবিত্র অবস্থায় ঘুমিয়েছে।”
(বুখারি, মুসলিম)
ওজু করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় এবং রাতে অশুভ শক্তি থেকে নিরাপত্তা মেলে।
২. আয়াতুল কুরসি পড়া
আয়াতুল কুরসি পড়া ঘুমানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি পড়লে রাতভর আল্লাহর পক্ষ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি রাতে আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমায়, সকাল পর্যন্ত শয়তান তার কাছে আসতে পারে না।”
(বুখারি)
৩. সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিলাওয়াত করা
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর আগে এই তিনটি সূরা তিনবার করে পড়তেন। এরপর তিনি নিজের দুই হাতের তালুতে ফুঁ দিতেন এবং শরীরের উপর হাত বুলাতেন।
এটি রাতে অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করে এবং মানসিক শান্তি দেয়।
(বুখারি, মুসলিম)
৪. ঘুমের দোয়া পড়া
ঘুমানোর আগে রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দোয়াটি পড়তেন:
“আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া”
(অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার নামেই আমি মৃত্যু বরণ করি এবং তোমার নামেই জীবন লাভ করি।)
(বুখারি, মুসলিম)
এই দোয়াটি আল্লাহর ওপর ভরসা এবং জীবন-মৃত্যুর প্রতি সচেতনতার প্রতীক।
৫. সূরা মুলক তিলাওয়াত করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“যে ব্যক্তি সূরা মুলক পড়ে ঘুমায়, তা তাকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করবে।”
(তিরমিজি)
সূরা মুলক প্রতিরাতে পড়া আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত বরকতময়।
৬. তওবা ও ইস্তেগফার করা
ঘুমানোর আগে আল্লাহর কাছে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। হাদিসে এসেছে,
“যে ব্যক্তি নিয়মিত তওবা করে, আল্লাহ তাকে সব পাপ থেকে মুক্তি দেন।”
ইস্তেগফার ও তওবার মাধ্যমে আত্মা পবিত্র হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়।
৭. নিজের হিসাব নেওয়া
দিনের শেষে নিজের কাজগুলো নিয়ে চিন্তা করা এবং সেগুলোর জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা কিংবা ভুলের জন্য তওবা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একজন মানুষের আত্মিক উন্নতির চাবিকাঠি।
৮. নির্দিষ্ট যিকির করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) রাতে ঘুমানোর আগে কিছু বিশেষ যিকির করার পরামর্শ দিয়েছেন।
৩৩ বার সুবহানাল্লাহ
৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ
৩৪ বার আল্লাহু আকবার
এটি মানসিক প্রশান্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম।
৯. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা
ঘুমানোর আগে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া এবং পরিষ্কার অবস্থায় ঘুমানো সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মানসিক শান্তি আনে এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।
১০. মৃত্যুর প্রস্তুতি মনে করা
ঘুম হলো ছোট মৃত্যু। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “ঘুম মৃত্যু ভাইয়ের মতো।” তাই রাতে ঘুমানোর আগে এ ধারণা মনে রাখা উচিত যে এটি হয়তো জীবনের শেষ রাত হতে পারে। এটি আমাদেরকে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হতে এবং তওবা করতে উদ্বুদ্ধ করে।
আল্লাহ আমাদেরকে সুন্নত মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন।