বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ফের জলাতঙ্কের টিকার সংকট
নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ফের জলাতঙ্কের টিকায় সংকট দেখা দিয়েছে। জরুরি অবস্থায় বাধ্য হয়ে সেবাপ্রার্থীদের বাইরে দোকান থেকে টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে এই টিকা।
গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ওই হাসপাতালে গিয়ে এমন ঘটনা জানা যায়। জলাতঙ্কের টিকার সরবরাহ না থাকায় প্রতিদিন বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা।
সেবা নিতে এসে এমনই বিপাকে পড়েছেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কালাইহাটা গ্রামের বাসিন্দা রাশেদা বেওয়া (৬০)। সম্প্রতি রাশেদার পায়ে একটি কুকুর কামড় দেয়। এ কারণে টিকা নিতে হাসপাতালে যান তিনি। কিন্তু যখন তিনি শুনলেন টিকা ও সিরিঞ্জ নিজের কিনতে হবে তখনই কান্নায় ভেঙে পড়েন রাশেদা।
রাশেদা জানান, গত বুধবার জলাতঙ্কের টিকার এক ডোজ নিয়েছেন তিনি। ওই সময় টাকা লাগেনি। দ্বিতীয় ডোজ নিতে এসে শুনলেন নিজেরই সবকিছু কিনতে হবে। তার কাছে টাকা নেই। হাসপাতালের লোকজনের কাছে অনেক অনুরোধ করেও কোনো সুরাহা পাননি। পরে টিকা নিতে আসা একজন তাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন।
বিড়ালের আক্রমণের শিকার হয়ে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে টিকা নিতে আসা যুবক বুলবুল হোসেন জানান, হাসপাতালে এসে শুনেছি টিকার সরবরাহ নেই। পরে চারজন ভুক্তভোগী মিলে টিকা ও সিরিঞ্জ কিনতে হয়েছে।
হাসপাতালে টিকা নিতে আসা অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝে মাঝে এখানে টিকা কিনতে হয়। ওই সময় চারজন মিলে টিকা ও সিরিঞ্জ কিনে ব্যবহার করেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টিকা শেষ হয়ে যাওয়ার আগে চাহিদাপত্র পাঠালে এমন পরিস্থিতি দেখতে হয় সাধারণ মানুষের। আর এই টিকা কেনার মতো সামর্থ্য অনেকের থাকে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে মাঝেমধ্যেই জলাতঙ্কের টিকা কিনতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে চারজন ভুক্তভোগী মিলে একটি করে জলাতঙ্কের ভায়োয়েল ক্রয় করেন। টিকা ও চারটি সিরিঞ্জ মিলে এতে খরচ হয় ৫২০ টাকা। চারজন ভুক্তভোগী ১৩০ টাকা করে দিয়ে টিকা কেনেন। এতে সবারই টিকার এক ডোজ করে হয়ে যায়।
এর আগে চলতি বছরের ৫ আগস্টের পর অন্তত দু সপ্তাহ জলাতঙ্কের টিকার সংকট ছিল। সে সময়ে টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের বাইরে দোকান থেকে উচ্চ মূল্যে কিনতে হয়।
সাধারণত জলাতঙ্কের প্রকোপ কমাতে সরকার এর টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করে। কিন্তু কিছুদিন পরপরই মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকার সংকট দেখা দেয়। হাসপাতাল চত্বরের ফার্মেসি থেকে টিকা ও সিরিঞ্জ কেনেন ভুক্তভোগীরা।
হাসপাতালের টিকা দানকারীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৮০-২০০ জন করে জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসেন।
জানতে চাইলে সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কাজী মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালে মজুত থাকা টিকা শেষ হয়ে গেছে। আগের তুলনায় কুকুর ও বিড়ালের মাধ্যমে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করেছি। দুই-চারদিনের মধ্যে জলাতঙ্কের টিকা পেয়ে যাবো।