সারিয়াকান্দিতে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কী?
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে সংগ্রহ অভিযান শুরুর দেড় মাসে মাত্র নয় শতাংশ ধান সরকারি গুদামে উঠেছে। চাল সংগ্রহেও উপজেলায় দেখা গেছে ধীরগতি। ধান-চালে সরকারি দামের চেয়ে বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় চলতি বছরের আমন মৌসুমের এই অভিযানে ব্যর্থতার মুখে পড়ছে উপজেলা খাদ্য বিভাগ।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে সারিয়াকান্দিতে ৮৬৪ মেট্রিক টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়াও ৫০০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
খাদ্য বিভাগে চাল সরবরাহের জন্য ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে চুক্তি করে চালকল মালিকরা (মিলার)। এ ছাড়া ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান এবং ১৭ নভেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সিদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করা হয়।
এরই মধ্যে সারিয়াকান্দিতে ৪৮ চালকল মালিকের সঙ্গে সেদ্ধ চাল ও আতপ চাল সংগ্রহের বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে। সেদ্ধ চাল ৪৭ টাকা ও আতপ চাল ৪৬ টাকা এবং ধান ৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ১৪ শতাংশের নিচের আর্দ্রতায় ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়। কৃষি বিভাগের নির্ধারিত কার্ডের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে এসব ধান সংগ্রহের কথা রয়েছে। এসব কৃষকরা জনপ্রতি ১২০ কেজি থেকে তিন মেট্রিক টন পর্যন্ত ধান সরকারি গুদামে দিতে পারবেন।
কিন্তু উপজেলা খাদ্য বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এ পর্যন্ত সারিয়াকান্দি খাদ্য গুদামে ৮৬৪ মেট্রিক টন ধানের বিপরীতে ৭৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। আর ৫০০ মেট্রিক টন চালের বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ১৯৭ মেট্রিক টন।
খাদ্য গুদামে ধান না দেয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে অধিকাংশ কৃষকের কাছেই ধান সংগ্রহের বিষয়ে খাদ্য বিভাগের কোনো বার্তা পৌঁছায় না। যে কারণে প্রকৃত চাষিরাই এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটা যে শুধু এ বছরেই হয় না বরাবরই এরকম হয়ে আসছে।
উপজেলার কড়িতলা এলাকার কৃষক হোসেন জানান, প্রতি বছর আমন ও বোরো মৌসুমে ৭ থেকে ৮ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন তিনি। তবে খাদ্য গুদামে ধান কখন ক্রয় হয়, সে বিষয়ে তিনি কোনো কিছু জানতে পারেন না। ওই এলাকার অন্য কোনো চাষি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করেছেন, এমন কোনো তথ্য তার কাছে নেই বলে তিনি জানান।
উপজেলার বাঁশহাটার আজাহার বলেন, প্রতিবছর শুনি সরকার ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। আসলে কাদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়, সে বিষয়টি আজ পর্যন্ত জানতে পারলাম না। তিনি বলেন, সরকারি ধান সংগ্রহ অভিযানে প্রকৃত চাষিরা সুযোগ পায় না, যে কারণে প্রতিবছর এ কর্মসূচি এ অঞ্চলে ব্যর্থ হচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক কৃষকের ভাষ্য, সরকার যখন ধান সংগ্রহ করে, তখন বাজার অপেক্ষা নির্ধারিত দাম কম থাকে। তাছাড়া খাদ্যগুদামে ধান দিতে গিয়ে কৃষককে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। এসব কারণে কৃষক খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহী হয় না।
সারিয়াকান্দি উপজেলা মিল মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, প্রথম দিকে তাও কিছু লস দিয়ে হলেও মিল মালিকেরা খাদ্য গুদামে কয়েক শ মেট্রিক টন চাল দিয়েছে। এখন তা একেবারে অসম্ভব কারন সরকারী দর হলো ৪৭ টাকা আর এখনকার বাজার থেকে ধান কিনে চাল তৈরী করতে খরচ হয় প্রতি কেজি ৫৩ টাকা। মিল মালিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে এভাবে আর তারা লোকসান স্বীকার করতে রাজি না।
উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম বলেন, মিল মালিকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার মাধ্যমে ১৯৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছি। এখনও যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। কিন্তু ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সন্দিহান রাশেদুল ইসলাম।
লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে একই রকম হতাশা প্রকাশ করেন সারিয়াকান্দি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দেওয়ার আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমন মৌসুমে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা তাদের কাছাকাছি বাজারে ধান বিক্রি করে দিয়েছে। এছাড়া খাদ্য গুদাম দূরে হওয়ায় কৃষকরা যাতায়াত খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে ধান দিতে আগ্রহী নন। এবার বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সংগ্রহ সম্ভব হবে না।