বগুড়ায় স্কুলের টাকা ‘আত্মসাতের’ পর প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে সহকারী শিক্ষক

বিএনপির সাবেক নেতা সহকারী শিক্ষক আব্দুল হালিম দুদু। সরকার বদলে এক ধাপেই বাগিয়ে নিয়েছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ। তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের শেষ এখানেই নয়। কৌশলে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতও করেন তিনি। উপজেলা বিএনপির সাবেক এই নেতার ভয়ে স্কুলেও যেতে পারছেন না প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকী। এমনকি দুদুর লোকজন তাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাটি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। পরে ১২ আগস্ট প্রধান শিক্ষক দিলরুবা লাকীর কক্ষে গিয়ে তাকে স্কুল ছেড়ে চলে যেতে বলেন দুদু। পরবর্তী ১৪ আগস্ট থেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন লাকী। এরপর এক সভায় সহকারী শিক্ষক দুদুকে ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিদ্যালয়ে জমি দান করেছিলেন দুদুর বাবা মৃত এলাহী বক্স। এরপরেও মহাসড়কে সেই জমি অধিগ্রহণের টাকা দুদু তার ভাইদের নাম ব্যবহার করে আত্মসাত করেছেন। তবে সেই জমির ওপর নির্মিত স্থাপনার টাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই পেয়েছে। দুদু ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান যোগসাজসে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে প্রধান শিক্ষক মীর্জা দিলরুবা লাকীর অভিযোগ।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নথি অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে অধিগ্রহণ করা মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণ করা মার্কেট ভবনের মাঝিড়া মৌজার ৬৪১ দাগের দশমিক ০১৭৫ শতক জমির ২০ লাখ ৯ হাজার ৭৩৬ টাকা চেক গ্রহণ করেন দুদুর ভাই আব্দুল হাকিম। সেইসাথে ৬৩৭ দাগে দশমিক ০০৩৮ শতকের ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৯ টাকার চেকও গ্রহণ করেন তিনি। একই দিন দুদুর আরেক ভাই আব্দুল হামিদ লয়া ৬৪২ দাগে দশমিক ০২ শতক জমির ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪১ টাকার চেক গ্রহণ করেন। দুদুর এ দুই ভাইয়ের মোট ৪৭ লাখ ৪২ হাজার ৯৭৬ টাকা গ্রহণের তথ্য এখন পর্যন্ত জানা গেছে।
তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীর্জা দিলরুবা লাকী দাবি, দুদু তার ভাইদের ব্যবহার করে স্কুলের জমির ৯৬ লাখেরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসব কাজে তাকে সহায়তা করেছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতি নূরুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, জমি অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাত করলেও স্থাপনার ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বিদ্যালয়ে জমা করা হয়েছে। সর্বশেষ আমাকে বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিদ্যালয়ে গেলে আমাকে হত্যা করা হবে বলে দুদুর লোকজন হুমকি দিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল হালিম দুদু বলেন, এসব মিথ্যা অভিযোগ। আমাদের জমির ওপর স্কুলের স্থাপনা ছিল। জমির টাকা আমরা পেয়েছি আর স্থাপনার টাকা পেয়েছে স্কুল। আমার বাবা স্কুলে যে জমি দান করেছেন, তা মহাসড়কের মধ্য পড়েনি। আমার বাবার দান করা জায়গায় বিদ্যালয়ের ভবন রয়েছে।
তিনিও আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক মীর্জা দিলরুবা লাকীকে হত্যার হুমকি দেইনি। তার অনুপস্থিতিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এসব ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাইফুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক মীর্জা দিলরুবা লাকীকে হত্যার হুমকি ও জমির টাকা আত্মসাতের বিষয় আমার জানা ছিল না। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।