প্রধান খবরসারিয়াকান্দি উপজেলা

২৬ মাসের হাজিরা ভাতা নেই সারিয়াকান্দির গ্রাম পুলিশদের, বেতনও বকেয়া ১১ মাস


বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় গ্রাম পুলিশদের ২৬ মাস ধরে হাজিরা ভাতা দেয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে বেতনের ইউনিয়ন পরিষদের অংশের টাকা বকেয়া আছে ১১ মাসের।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) বলছে, পরিষদের আয় না থাকায় গ্রাম পুলিশদের বেতন-ভাতা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বেতন-ভাতার অর্ধেক টাকা নিয়ে দিনের পর দিন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন যমুনা নদী পাড়ের উপজেলার গ্রাম পুলিশরা।


ইউনিয়ন পরিষদ ও গ্রাম পুলিশদের সূত্রে জানা যায়, সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১২ টি ইউনিয়ন পরিষদে ১১৮ জন গ্রাম পুলিশ। এর মধ্যে ৭ জন নারী। গ্রাম পুলিশরা প্রতি মাসের জন্য ৬৫০০ টাকা বেতন-ভাতা পান। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে ৩২৫০ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩২৫০ টাকা পান তারা।


এ ছাড়া প্রতি মঙ্গলবারে সারিয়াকান্দি থানায় তাদের হাজিরা দিয়ে নিজ ইউনিয়নের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিবেদক দিতে হয়। এর জন্য প্রতি মাসে ১২০০ টাকা করে হাজিরা ভাতা পেয়ে থাকেন গ্রাম পুলিশ সদস্যরা।


কিন্তু গ্রাম পুলিশদের অভিযোগ, সরকারি অংশ নিয়মিত পেলেও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে না। সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২ ইউনিয়ন পরিষদে ১১ মাসের বেতন বকেয়া আছে।
আর থানায় হাজিরা দেয়া বাবদ প্রতি মাসে গ্রাম পুলিশদের ১২০০ টাকা করে দেয়ার নিয়ম। কিন্তু গত ২৬ মাস ধরে এই হাজিরা ভাতার কোনো টাকাই তারা পাননি।


এসব বিষয়ে কথা হয় সারিয়াকান্দি উপজেলার বোহাইল ইউপির গ্রাম পুলিশ সদস্য বেলাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি উপজেলা গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক।


আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘বেতন-ভাতা পাই না, চাইতে গেলে ইউএনও থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান স্যাররা আমাদেরকে ধমক দেন, শরীরের এমন পোশাক নিয়ে আর কতদিন চলবো। বাড়িতে গেলে বউ -ছাওয়াল জিজ্ঞেস করে, কি হলো, বেতন-ভাতা পাইলা, জবাব দিতে পারি না।’

বেলাল হোসেন জানান, বেতন বকেয়ার থাকার কারণে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। অনেক গ্রাম পুলিশ ধার দেনা করে চলছেন। পরিবারের ছেলে-মেয়েদেরকে স্কুলে ভর্তি করানো বা লেখাপড়া শেখানো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।


হাটশেরপুর ইউপি গৌতম চন্দ্র নামে আরেক গ্রাম পুলিশ জানান, ১৩ মাসের বেতন বকেয়া ছিল। এটা নিয়ে একাধিকবার দাবি তোলার প্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে ৩ মাসের বেতন দেয়া হয়। এখন আছে ১১ মাসের। ইউনিয়ন পরিষদে কথা বললে তারা বলেন যে আয় নেই। কোথায় থেকে দিব।


কর্নিবাড়ী ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আফজাল হোসেন বলেন, পরিষদে দলিল খরচের ১ শতাংশ টাকা থেকে আমাদের বেতন ভাতা দেয়া কথা। কিছু দিয়েছে। বাকিগুলো কবে পাবো জানি না। আর হাজিরা ভাতার বিষয়টি আমাদের জন্য আরও কষ্টকর। কারণ আমাদের সপ্তাহে একদিন থানায় আসা-যাওয়া করতে ১০০-১৫০ টাকা খরচ হয়। সেই টাকা ২৬ মাস ধরে পাচ্ছি না। এই টাকা নিয়মিত পেলে আমাদের কষ্ট কিছুটা কমত।


এসব বিষয়ে সারিয়াকান্দির ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে কোনো সদুত্তর মেলেনি। বেতন বকেয়া থাকার বিষয়ে বোহাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খাঁনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। এটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলতে পারবেন।


চালুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, গ্রাম পুলিশদের পরিষদের অংশের বেতন কিছু পরিশোধ করা হয়েছে। পরিষদের আয় থেকে তাদের এই বেতন দেয়া হয়। কিন্তু ৪০ বছর ধরে এই ইউনিয়নের কেউ ট্যাক্স দেন না। আয় না হওয়ায় তাদের বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারপরেও কিছু কিছু করে বেতন দেয়া হচ্ছে।


বেতন-ভাতা বকেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহারিয়ার হোসেন। তিনি বলেন, গ্রাম পুলিশদের বেতন পরিষদের আয় থেকে দেয়া হয়। আমরা ইউনিয়ন পরিষদকে চাপ দিচ্ছি, বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য। তিন মাসের ভাতা দেয়াও হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের কাছে আমরা চিঠি দিচ্ছি বেতন-ভাতার বিষয়ে।


কিন্তু হাজিরা ভাতা বকেয়া থাকার কারণ জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, আমরা দেয়ার চেষ্টা করছি। এটার জন্য সরকারি বরাদ্দ পেলে তাদেরকে দিয়ে দিব।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button