বগুড়ায় জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব: শ্রমিক দলের নেতার বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ

বগুড়ার গাবতলীতে প্রায় ৯০ বছরের পুরোনো মালিকানাধীন জমি নিয়ে কয়েক দফা হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় জমি ভোগকারী পরিবারের একাধিক সদস্য আহতও হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হামলার শিকার পরিবারের দাবি, স্থানীয় শ্রমিক দলের এক নেতা বিবাদী পক্ষের হয়ে তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর উত্তরপাড়ায় সম্প্রতি এই হামলাগুলোর ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গাবতলী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন হামলার শিকার পরিবারের সদস্য আব্দুল বাছেদ।
অভিযোগপত্রে ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে খাজা মিয়া, রাজা, জিন্না, আব্দুল খালেক, রঞ্জু, আব্দুর রাজ্জাক অন্যতম আসামি। তারা সবাই রামেশ্বরপুর উত্তর পাড়ার বাসিন্দা। এই খাজা মিয়া রামশ্বেরপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক।
আব্দুল বাছেদের পরিবারের গুরুতর আহত সদস্য হলেন তোফাজ্জল হোসেন প্রামানিক, আমিনুর ও শহিদুল প্রামানিক। এদের মধ্যে তোফাজ্জল ও আমিনুর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ছাড়া রানা, ডাবলু মিনাজুল নামে আরও তিনজন আহত হন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আব্দুল বাছেদ ও তার স্বজনদের দাবি, ১৯৩২ ও ১৯৩৫ সালে দুই দফায় একই দাগের মোট ৬০ শতক জমি ক্রয় করেন তাদের পূর্বপুরুষ। এরপর থেকে সেই জমি ওয়ারিশ সূত্রে ভোগদখল করে আসছেন তারা। এম আর খতিয়ানভুক্ত হয়ে কিছু অংশের জমির খাজনা-খারিজ নিয়মিত দিয়ে আসছেন বাদী পক্ষ।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালে এই ৬০ শতক জমির প্রায় অর্ধেক অংশ দাবি করেন জমির পূর্বের মালিকের ওয়ারিশ রঞ্জু, আব্দুর রাজ্জাকসহ কয়েকজন। ওই বছরে তারা একটি বন্টন মামলা করে আদালতে। সেটি চলমান আছে। সম্প্রতি এই জমির দখল নিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন রঞ্জু ও তার ভাইয়েরা।
থানায় করা অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর বাছেদের ভাতিজা আমিনুরকে জমির বিরোধ নিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। এতে থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে তার প্রতিবেদন আদালতে দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে তাদের বিপক্ষ ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বাছেদের সেচপাম্পের বৈদ্যুতিক মিটার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এর পরের দিন গভীর রাতে আবার তারা বাছেদ ও তার স্বজনদের খড়ের পালায় আগুন দেয়। এতে ৫ টি খড়ের পালা পুড়ে যায়।
এ বিষয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি নিলে প্রতিপক্ষরা ওই ৬০ শতক জমির ফসল নষ্ট করার জন্য রাতের বেলা বিভিন্ন গাছ রোপন করে। ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে আব্দুল বাছেদ ও তার ভাই ভাতিজা ওই জমিতে গেলে খাজা মিয়ার নেতৃত্বে একাধিক ব্যক্তি তাদের ওপর হামলা করে।
অভিযোগকারী আব্দুল বাছেদ জানান, এটা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়ভাবে সালিসে বসা হয়েছিল। সে সময় আদালতের রায় হওয়া পর্যন্ত আমাদের জমি ভোগদখল করার পরামর্শ দেয়া হয়। থানাতেও বসা হয়েছিল। কিন্তু বিপক্ষরা এই মতামত মানেনি। এখানে তৃতীয় পক্ষ আরও বেশি সমস্যা করছে।
বাছেদ বলেন, এই তৃতীয় পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খাজা মিয়া। এই ব্যক্তি আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। এখন বিএনপির শ্রমিক দলের নেতা হয়ে আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
তবে হামলার ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করছেন শ্রমিক দলের নেতা খাজা মিয়া। তিনি বলেন, আমি ওদের কাগজপত্র দেখেছি। আব্দুল বাছেদরা ওই জমি পাবে না। হামলার কথা যেটা বলা হচ্ছে, ওটায় তো তারা তেমন কোনো আহত হয়নি। একজনের মাথায়, আরেকজনের পায়ে আঘাত। এতে তো সমশের আলীর পরিবারের লোকজনও আহত হয়েছে।
খাজা মিয়া জানান, আমি তাদের (আব্দুল বাছেদের পরিবার) বলেছি আদালতের রায়ের আগে তোমরা জমিতে এসো না। এ জন্য তারা আমাকে দোষ দিচ্ছে। বলেছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। কিন্তু আমি আগে থেকে বিএনপির রাজনীতি করি।
তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, খাজা মিয়া আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে থাকতেন। ৫ আগস্টে পট পরিবর্তনের পর তিনি বিএনপির রাজনীতি করছে।
এ বিষয়ে গাবতলী মডেল থানার ওসি আশিক ইকবাল বলেন, ওই ঘটনায় একবার থানা পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য দু পক্ষকে নিয়ে বসেছিল । কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। এখানে স্থানীয় কিছু লোকজন উসকানী দিয়ে আসছে। হামলার ঘটনায় আব্দুল বাছেদ একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিবে পুলিশ।