আইন ও অপরাধপ্রধান খবরবগুড়া জেলা

বগুড়ায় দুদকের মামলায় যুবলীগ নেতা মতিন সরকারের ১৩ বছর জেল

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় বগুড়ার বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা আব্দুল মতিন সরকারের ১৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে জ্ঞাত আয় বলেন বহির্ভূত ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া এই রায় ঘোষণা করেন বগুড়ার স্পেশাল জজ মো. শহিদুল্লাহ।

তবে রায় ঘোষণার সময় মতিন সরকার আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি ৫ আগস্টের পর হত্যাসহ একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে পলাতক রয়েছেন।

বিষয়টি জানিয়েছেন দুদকের স্পেশাল পিপি আবুল কালাম আজাদ।

এর আগে ২০১৯ সালে ১৭ ফ্রেব্রুয়ারি আবদুল মতিন সরকারের অবৈধ সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ‘ফ্রিজ’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর ফলে আবদুল মতিন সরকার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ আদালতের নির্দেশ ছাড়া অন্য কারও কাছে হস্তান্তর এবং ব্যাংকে রাখা অর্থ কোথাও স্থানান্তর করতে পারত না।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বগুড়ার তুফান সরকার ও তার ভাই মতিন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বগুড়ার সমন্বিত দুর্নীতি দমন কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় এ মামলা করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চার্জশিট দাখিল করেন তিনি।

তুফান বগুড়ার আলোচিত এক ধর্ষণ মামলার আসামী ছিলেন। বর্তমানে হত্যা মামলা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার ভাই মতিন সরকার বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তুফানের ধর্ষণকাণ্ড আলোচিত হওয়ার পর মতিন সরকারকে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট বহিষ্কার করা হয়।

মতিনের বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে উল্লেখ করা হয়, তুফান সরকারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। এরপর ২০১৮ সালের মার্চ মাসে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠানো হয়। ওই মাসেই দুদকে ৯১ লাখ ৭০ হাজার টাকার স্থাবর ও ৩৮ লাখ ৯ হাজার ১৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেওয়া হয়। সম্পদ যাচাই করে দুদক তুফানের জমি, বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংকে সঞ্চয়সহ ১ কোটি ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকার মূল্যের সম্পদের সন্ধান পায়। দুদকে জমা দেওয়া নথিতে তুফান ২৯ লাখ ৭৯ লাখ ৮৭০ টাকার মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গোপন করেছেন।

তার আয়ের বৈধ কোনো উৎসও নেই। তিনি কোনো আয়কর রিটার্ন দাখিল কিংবা কোনো খাতের আয় প্রদর্শন ও আয়কর পরিশোধ করেননি। মতিন সরকারের স্ত্রী তাসনিম সরকারেরও কোনো আয়ের উৎস নেই। তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১ কোটি ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮৫ টাকা অর্জন করার প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক। পরে দুদক আইন ২০০৪ –এর ২৬ ও ২৭ (১) ধারায় তার বিরুদ্ধেরও একটি মামলা করা হয়। মামলায় ১৩ জনের স্বাক্ষী গ্রহণ করেন আদালত।

এসব শুনানীর শেষে মামলায় মতিনের বিরুদ্ধে আজ আদালত রায় দিয়েছেন বলে জানান বগুড়ায় দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবুল কালাম আজাদ।

প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই কলেজে ভর্তির কথা বলে এক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন তুফান। পরে তুফানের স্ত্রী ও তার বড় বোন নারী কাউন্সিলর এবং তুফানের লোকেরা ধর্ষণের শিকার ছাত্রী ও তার মায়ের ওপর নির্যাতন চালান। এরপর দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা বাদী হয়ে ২৮ জুলাই রাতে মামলা করেন।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button